লেখকঃ সীমান্ত সিংহা
আপনার বাচ্চার অথবা ছোট ভাই/বোনের মধ্যে কি মনোযোগের ঘাটতি আর অতিরিক্ত চাঞ্চল্য দেখতে পান?
শুধু আপনার বাচ্চা না, আপনার নিজের মধ্যেও কি এগুলো কখনও লক্ষ্য করেছেন??
➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖
এই অতিরিক্ত চাঞ্চল্য এবং মনোযোগের ঘাটতির পিছনে দায়ী হলো "ADHD". যার পূর্ণরূপ "Attention Deficit Hyperactivity Disorder". এটি মূলত একটি Neurodevelopmental disorder.
সাধারণত ৫-১৭ বছর বয়সী বাচ্চাদের মধ্যে ADHD দেখা যায়। প্রতি ১০ জনে ১ জন শিশু এতে আক্রান্ত হয়। গড়ে শিশুর বয়স ৭ হলেই তার মধ্যে ADHD এর লক্ষণগুলো পুরোপুরি প্রকাশ পায়। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের ADHD তে আক্রান্তের হার প্রায় দ্বিগুণ!
আর হ্যাঁ, শুধু বাচ্চারা না, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও ADHD দেখা যায় (নিচের অংশে বিস্তারিত)।
⭕ ADHD কে মূলত ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো-
১| Inattentive ADHD:
এই ধরণের শিশুরা ডে ড্রিমিং অর্থাৎ দিবাস্বপ্ন বেশি দেখে। তারা কোথাও মনোযোগ দিতে পারে না, কোনো কাজ ঠিকভাবে শেষ করতে পারে না আর কোনো নির্দেশনাও মানতে পারে না। এটি মেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
(এটিই আগে ADD অর্থাৎ Attention Deficit Disorder নামে পরিচিত ছিলো)
২| Hyperactive-Impulsive ADHD:
এদের মধ্যে প্রচন্ড অস্থিরতা কাজ করে। তারা স্থির হয়ে কোথাও বসে থাকতে পারে না, অন্যদের কাজে বাঁধা দেয়, একদমই অপেক্ষা করতে পারে না।
৩| Combined inattentive and hyperactive-impulsive ADHD:
এই ধরণটিই সবচেয়ে কমন এবং সচরাচর দেখা যায়। এই ধরণের বাচ্চারা একইসাথে Inattentive এবং Hyperactive উভয়েরই লক্ষণ প্রকাশ করে।
⭕ আপনার বা আপনার বাচ্চার অথবা ভাই/বোনের ADHD আছে কি-না বোঝার জন্য এর প্রধান লক্ষনগুলো মিলিয়ে নিন-
▪️তারা কারোর কোনো নির্দেশ মানতে চায় না। নিজের ইচ্ছামতো কাজ করে।
▪️সবসময় একটা উত্তেজনার মধ্যে থাকে।
▪️কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারে কিন্তু বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারে না। আবার তার আশেপাশে কি ঘটছে সেটা মনে রাখতে পারে না।
▪️আবেগ এবং অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। হঠাৎ-ই প্রচন্ড রেগে যায় বা দুঃখ পায়।
▪️অন্যদের কাজে বাঁধা দেয়। বিশেষ করে অন্যদের কথার মধ্যে কথা বলবেই, তা যত গুরুত্বপূর্ণ কথাই হোক।
▪️বাঁচালতা বৃদ্ধি পায়। সবসময় অতিরিক্ত কথা বলে।
▪️কোথাও স্থির হয়ে বসে থাকতে পারে না। বিশেষ করে যেসব জায়গায় নিরবতা বজায় রাখতে হয়, সেসব জায়গায় তারা নিজেকে সামলাতে পারে না।
▪️তারা কখনই নিজের ভুল শোধরাতে চায় না। ঠিক করে দিলেও একই ভুল বারবার রিপিট করে।
⭕ ADHD এর কারণ:
গবেষণায়(১) দেখে গেছে যে, মস্তিষ্কে ডোপামিন কমে যাওয়া ADHD এর একটি কারণ।
আরও একটি গবেষণা(২) দেখায় যে, ADHD তে আক্রান্তদের মস্তিষ্কে কাঠামোগত কিছু পার্থক্য থাকে। সহজ ভাষায় স্বাভাবিক এর তুলনায় তাদের Gray Matter কিছুটা কম থাকে।
ADHD এর প্রধান কারণ ধরা হয় জিনগত। পূর্ব প্রজন্মে কারোর এটি থাকলে পরবর্তী প্রজন্মে এটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অধ্যাপক Roy Perlis এর গবেষণায় জানা যায়, গর্ভাবস্থায় মানসিক রোগের ওষুধ খেলে সন্তানের ADHD হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরও কিছু গবেষক এর মতে জিংকের ঘাটতি, শিশু খাদ্যে কৃত্রিম রঙ এবং গর্ভাবস্থায় মাদক গ্রহন ও ধূমপান এর কারণেও ADHD হতে পারে।
⭕ ADHD এর চিকিৎসা:
অনেকেরই বয়স বাড়ার সাথে ADHD কমে যায়।
কিন্তু, ADHD আক্রান্ত শিশুদের প্রায় ৬০%, প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও আক্রান্ত থাকেই।
প্রাপ্তবয়স্কদের জীবনে ADHD খুব ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তারা সব ক্ষেত্রে অস্থিরতা, অধৈর্য এবং ভুলে যাওয়া সহ আরও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। আর এটি তাদের সব ধরণের সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে।
তাই, সময়মতো এর চিকিৎসা একটি জরুরী বিষয়।
ADHD এর চিকিৎসা হিসেবে Behavioral therapy, ওষুধ অথবা দুটোই ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু এক্ষেত্রে ওষুধ যত কম খাওয়া যায় তত ভালো। কারণ, ওষুধ এর প্রভাব থাকে প্রায় ৮-১০ ঘন্টা। এর থেকে Behavioral therapy অনেক বেশি ভালো এবং কার্যকর হবে।
🟥 সতর্কতা:
বাচ্চারা অতিরিক্ত চঞ্চল হতেই পারে। আবার কারোর মনোযোগ একটু কম হতেই পারে। তাই, বলে এগুলো দেখেই ধরে নেওয়া যাবে না যে, সে ADHD তে আক্রান্ত। সবগুলো লক্ষণ ভালোভাবে মিলাতে হবে। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ডাক্তার এর পরামর্শ নিতে হবে।
✅ গবেষণা(১)-
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/19738093/
✅গবেষণা(২)-
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/26748338/
সীমান্ত সিংহা,
ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান।