Ads Area

advertise

অটোমেটিক সানগ্লাস

0
লেখকঃ নুজহাত নুরিয়া টিয়া


সানগ্লাস আমাদের একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় সাথী যা মূলত চোখকে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে রক্ষা করতে ব্যবহার করা হয়। তবে যারা চশমা ব্যবহার করে অনেকসময়ই আমরা দেখি তা একইসাথে সূর্যের আলোতে সানগ্লাস হিসেবেও কাজ করে ।অর্থাৎ, যখন ঘরে থাকে তখন চশমা আবার যখন বাহিরে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে যায় তখন একইসাথে চশমা ও সানগ্লাস। এই কাজটি করে ফটোক্রোমিক লেন্স। 
যেহেতু সানগ্লাস বছরের পর বছর বিবর্তিত হয়েছে তাই এর সাথে রসায়নেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে। 

যেভাবে গ্লাস লেন্সকে ফটোক্রোমিক করা হয়-

লেন্স এর গ্লাসে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সিলভার ক্লোরাইড (AgCl) স্ফটিক ব্যবহার করে তাকে ফটোক্রোমিক করা হয় যা গ্লাস-ম্যাট্রিক্স-এ আটকা পরে। সিলভার ক্লোরাইডের (AgCl)একটি অসাধারণ ধর্ম রয়েছে সেটা হলো - এতে আলো পড়লে কালোভাব সৃষ্টি করে। এই কালোভাব সৃষ্টি হয় যখন আলো সিলভার ক্লোরাইড (AgCl) স্ফটিক এর ক্লোরিন (Cl-) আয়ন থেকে সিলভার (Ag+) আয়নে ইলেকট্রন স্থানান্তর ঘটিয়ে একটি ক্লোরিন (Cl) ও একটি সিলভার (Ag) পরমাণু গঠন করে। এই কালোভাবটাই সানগ্লাসের কাজ করে। 

ফটোক্রোমিক গ্লাস লেন্স এর কার্যপ্রণালী-

ফটোগ্রাফিতে সিলভার (Ag) কণা দ্বারা নির্ধারিত ছবিকে রাসায়নিক পদ্ধতিতে ঠিক করা হয় যাতে তা স্থায়ী হয়। 
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ফটোক্রোমিক গ্লাসে এর বিপরীত প্রক্রিয়া ঘটে কারন অন্ধকারে বা ঘরের ভেতর গেলেই গ্লাস কালো থেকে পুনরায় সম্পূর্ন স্বচ্ছ হয়ে যায় অর্থাৎ এটা স্থায়ী না। ফটোক্রোমিক গ্লাসের এই বৈপরিত্যের কারন হচ্ছে এতে উপস্থিত কপার আয়ন(Cu+)।এই কপার আয়ন দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। 

প্রথমত, আলো-প্রভাবিত বিক্রিয়ায় উৎপন্ন ক্লোরিন (Cl) পরমাণুর সংখ্যা হ্রাস করে যা তাদের ( AgCl) স্ফটিক থেকে নির্গত হওয়া রোধ করে :
Ag+ + Cl- ----------> Ag + Cl
Cl + Cu+ ------------> Cu2+ + Cl-

দ্বিতীয়ত,
যখন আলোর তীব্রতা কমে ( ব্যক্তি যদি ঘরের ভেতরে যায় বা যেখানে UV RAY নেই), কপার আয়নগুলি (Cu2+) সিলভার ক্লোরাইড( AgCl) স্ফটিকে স্থানান্তরিত হয়, যেখানে তারা Ag থেকে ইলেকট্রন গ্রহণ করে ( যেহেতু Ag এর ক্ষুদ্র স্ফটিক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়):
Cu2+ + Ag ---------> Cu+ + Ag+
Ag+ আয়ন এ প্রক্রিয়ায় পুনর্গঠিত হয়ে ( AgCl) স্ফটিকে ফিরে যায় যার ফলে গ্লাস স্বচ্ছ হয়ে যায়। 

তবে গ্লাস ফটোক্রোমিক লেন্স এর পাশাপাশি প্লাস্টিক ফটোক্রোমিক লেন্সও হয়। তবে প্লাস্টিকের লেন্স ভিন্নধর্মী কেননা এই ফটোক্রোমিক প্রক্রিয়ায় প্লাস্টিকে জৈব রং ব্যবহার করা হয় যা নিজেদের কাঠামো পরিবর্তন করে যখন তারা আলো শোষণ করে। 
যেমন- ন্যাপথোপিউরান UV রশ্মি শোষণ করে পুনরায় নতুনভাবে সজ্জিত হয়। 
নিম্নোক্ত চিত্রের লাল অংশটুকুর বন্ধন ভেঙ্গে যায় যখন অণু UV রশ্মি শোষণ করে এবং পুনরায় সজ্জিত হয় যা দৃশ্যমান আলো শোষণ করে। এর ফলে লেন্সটি কালো হয় এবং সানগ্লাসের কাজ করে। 

যদিও এই লেন্স এর কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, যেমন- গাড়িতে এটা ভালো কাজ করেনা কারন গাড়ির উইন্ডশীলে কিছু পদার্থ থাকে যা অত্যন্ত সক্রিয় UV রশ্মি শোষক। 
তবুও এতে রসায়নের সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। আমাদের চোখের সাম্নেই প্রতিনিয়ত বিক্রিয়া হচ্ছে কিন্তু আমরা সেভাবে অনুভব করছিনা। এভাবে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই রসায়নের সম্পৃক্ততা রয়েছে যা আমরা সেভাবে ভেবে দেখিনা। তা জানতে হলে দরকার পর্যবেক্ষণ এবং পর্যবেক্ষণ।

তথ্যসূত্র :
https://www.chemservice.com/news/2014/08/what-is-the-chemistry-behind-sunglasses/

Chemical principles, Zumdahl

নুজহাত নুরিয়া টিয়া,
ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Top Post Ad

Below Post Ad

advertise