লেখকঃ টি আর এস তানভীর আহমেদ
আমরা প্রতি বছর ৮৮ লক্ষ টন প্লাস্টিক শুধুমাত্র সমুদ্রে ফেলছি। আর তাহলে উৎপাদনের কথা নাই বললাম। ভাবুন একবার! কী সাংঘাতিক! এগুলো নদী-নালা থেকে বা পরিবেশ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের ফুড চেইনে প্রবেশ করছে। হ্যাঁ তাই। আমরাও এখন মাইক্রো প্লাস্টিক খাচ্ছি হরহামেশাই।একটা মাথা নষ্ট করা তথ্য দেই। ওয়ান টাইম কাপে চা খান না? কিংবা পানির বোতল? এই সামান্য নরম প্লাস্টিক টাও পুরোপুরি বায়োডিগ্রেড মানে পরিবেশে মিশে যেতে প্রায় ২০০ বছর সময় লাগে। এখন তাহলে ভাবুন এটা যখন ডিগ্রেড হবে তখন প্লাস্টিকের এমাউন্ট কেমন থাকবে পৃথিবীতে যদি এখনকার মতো আমরা প্লাস্টিক ব্যবহার করেই যাই? তো এসব থেকেতো মানুষকে,পরিবেশকে,জীববৈচিত্র্য কে রক্ষা করতে হবে,তাই না? তো এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে একদল জাপানিজ বিজ্ঞানি কাজ শুরু করলো। মানে ধরেন গবেষণা আরকি। নানান ভাবে চিন্তা-চেতনার পর দেখলো এতো সহজে তো এই সমস্যার সমাধান করা যায় না,তাই মাইক্রোঅর্গানিজমের মাধ্যমে যদি কিছু করা যায়। তাহলে র্যাপিড ফলাফল এবং অল্প খরচে হয়তো কিছু করা যাবে৷ তাই তারা করলো কি বিভিন্ন গার্বেজ স্টেশন/ডাস্টবিন,ড্রেনেজে গবেষণা চালালো। তো কিছুদিন পর তারা এসব নোংরা যায়গায় এক আশ্চর্য ব্যাকটেরিয়া দেখতে পেলো। যার নাম দেয়া হলো পরবর্তীতে Ideonella sakaiensis 201-F6. যারা কিনা ঐ স্থানে থাকা প্লাস্টিককে ডিগ্রেইড করছে। এখন প্রশ্ন হলো ভাইয়া ব্যাকটেরিয়া তো মামুলী জীব। এরা কিভাবে প্লাস্টিকের মতো জিনিস ভেঙে ফেলে? এখানেই তো জড়িয়ে আছে মাইক্রোবায়োলজি,বায়োটেকনোলজি, বায়োকেমিস্ট্রির এক দুর্দান্ত কম্বিনেশন।
যাইহোক সংক্ষেপে বলি। এই ব্যাকটেরিয়া দুটো এনজাইম প্রোডিউস করে। একটা হলো PETase এবং আরেকটা হলো MHETase। এরা করে কী PET(Polyethylene terephthalate) জাতীয় প্লাস্টিকের মধ্যে যে এস্টার বন্ডের পলিমার আছে,সেগুলোকে কেটে দেয়। ফলে PET প্লাস্টিকের দুটো বিল্ডিং ব্লক আলাদা হয়ে যায়। এভাবে একসময় পরিবেশে প্লাস্টিক ডিগ্রেড হয়ে যায়। এখন কথা হলো সব ধরনের প্লাস্টিকে কি এই ব্যাকটেরিয়া তথা এনজাইম কাজ করবে? উত্তর হলো না। শুধু মাত্র PET এর বেলায় এটি কাজ করবে।আপনাদের যাদের হাতের কাছে প্লাস্টিকের বোতল আছে তারা এখুনি বোতলের তলায় খেয়াল করেন ত্রিভুজের মধ্যে PET নাম্বার দেয়া আছে। তাই এখনো কিন্তু পুরোপুরি সবধরনের প্লাস্টিক নির্মুলের কোন প্রক্রিয়া আবিষ্কার হয়নি। সে জন্য আমাদের নিজেদের সতর্ক হতে হবে। প্লাস্টিকের ব্যবহার অনেক কমিয়ে আনতে হবে। পানির প্লাস্টিকের বোতলের পরিবর্তে ফুড গ্রেড স্টেইনলেস স্টিলের বোতল ইউজ করতে পারি। বাজারে পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে পারি। বাংলাদেশের মধ্যে ময়মনসিংহ এখন পলিথিন মুক্ত জেলা। সো এভাবে আমাদের নিজেদের সীমিত ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে যেন প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত হয়। হয়তো সামনে বিজ্ঞানীরা এমন কোন প্রক্রিয়া আবিস্কার করবে যেখানে প্লাস্টিকের সম্পূর্ণ বিকল্প ব্যবহার থাকবে এবং পরিবেশে থাকা সমস্ত প্লাস্টিক দ্রুত ডিগ্রেড হয়ে যাবে।
link- https://research-highlights.keio.ac.jp/2016/04/b.html