লেখকঃ এ আর মুবিন
৪৫৪.৩ কোটি বছরের প্রাচীন এই পৃথিবীটা। আমাদের হোমো স্যাপিয়েন্সদের উদ্ভব যেখানে মাত্র ২ লক্ষ বছর আগে। মহাকালের স্কেলে চোখের একটা পলক ফেলার মতো সময়ও তো এটা না। এর আগে কোটি কোটি বছর ধরে কত কত দানব জল স্থল কাঁপিয়ে পৃথিবীতে রাজত্ব করে গেছেন। আর রেখে গেছেন পৃথিবীর পরতে পরতে ঘুমিয়ে থাকা শতকোটি বছরের রোমাঞ্চকর ইতিহাস।
৪৫৪.৩ কোটি বছরের প্রাচীন এই পৃথিবীটা। আমাদের হোমো স্যাপিয়েন্সদের উদ্ভব যেখানে মাত্র ২ লক্ষ বছর আগে। মহাকালের স্কেলে চোখের একটা পলক ফেলার মতো সময়ও তো এটা না। এর আগে কোটি কোটি বছর ধরে কত কত দানব জল স্থল কাঁপিয়ে পৃথিবীতে রাজত্ব করে গেছেন। আর রেখে গেছেন পৃথিবীর পরতে পরতে ঘুমিয়ে থাকা শতকোটি বছরের রোমাঞ্চকর ইতিহাস।৪৫৪.৩ কোটি বছরের প্রাচীন এই পৃথিবীটা। আমাদের হোমো স্যাপিয়েন্সদের উদ্ভব যেখানে মাত্র ২ লক্ষ বছর আগে। মহাকালের স্কেলে চোখের একটা পলক ফেলার মতো সময়ও তো এটা না। এর আগে কোটি কোটি বছর ধরে কত কত দানব জল স্থল কাঁপিয়ে পৃথিবীতে রাজত্ব করে গেছেন। আর রেখে গেছেন পৃথিবীর পরতে পরতে ঘুমিয়ে থাকা শতকোটি বছরের রোমাঞ্চকর ইতিহাস।
কালের মহাপ্রলয়ে সেই ইতিহাসের অধিকাংশই আজ বিস্মৃত। তবুও মাঝেমধ্যে মহাকালের চাদর ফুঁড়ে কিছু বুদবুদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, আর আমরা সেগুলোকে জিগস্ পাজলের মতো সাজিয়ে সেই পুরাকাহিনী উদ্ধারের চেষ্টা করে যাই। আমাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি এবং মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে আমরা যেটুকু জানছি সেটাও নেহাত কম কিছু তো নয়।
এই ইতিহাসের বিশাল একটা অংশ জুড়ে রয়েছেন ডাইনোসরেরা। পৃথিবীতে বৈচিত্র্য আনয়নে এবং আমাদের অস্তিত্বের পেছনেও উনাদের অবদান অনস্বীকার্য। তাই আজ আমি পার্সোনালি উনাদের রেস্পেক্ট করে কথা বলব, আশা করি এতে কেউ মাইন্ড করবেন না।
আজ থেকে প্রায় ২০ কোটি বছর আগে পৃথিবীটা বৈরী হয়ে ওঠে। শুরু হয় ট্রায়াসিক-জুরাসিক ধ্বংসযজ্ঞ। এর নির্দিষ্ট কারণ নিয়ে মতভেদ আছে। তবে কেউ কেউ মনে করেন বাইরে থেকে ছুটে আসা বিশাল কিছু অ্যাস্ট্রয়েড এর টুকরা এই ধ্বংসলীলার কারণ। তখন প্রায় ৮০% প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যায়।
সেই সময় কোনোভাবে সার্ভাইভ করে কিছু আর্কোসর টিকে যান। উনারা হলেন কুমির, আকাশ দানব টেরোসর এবং ডাঙায় বাস করা ডাইনোসর। পৃথিবীতে শুরু হয় উনাদের রাজত্ব। ট্রায়াসিক-জুরাসিক ধ্বংসস্তুপ ভেদ করে মাথা উঁচু করেন আর্কোসরের এই উত্তরাধিকারীরা। উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে থাকেন, সাথে বাড়তে থাকে শরীরের আকার। ক্রমে হয়ে উঠেন “ডাইনোসর”।
পরবর্তীতে এই ডাইনোসরগণ দুটি প্রধান ক্যাটাগরিতে ভাগ হয়ে যান। উনাদের মধ্যে লম্বা গলার ডাইনোসরদের ডাকা হয় সরোপড। আর খাটো গলার ডাইনোসরদের ডাকা হয় থেরোপড। সরোপড থেরোপড ছাড়াও আরো অনেক “গণ” এর ডাইনোসর ছিলেন। আজকের লেখাটা শুধু সরোপডদের নিয়ে। যাদের এখন পর্যন্ত ২৭২ টি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি পাওয়া গেছে।
শারীরিক গঠন:
সরোপডগণ ছিলেন আজ পর্যন্ত ডাঙায় বিচরণ করা প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা, সবচেয়ে উঁচু এবং সবচেয়ে ভারী। প্রজাতিভেদে লম্বায় ১৩০ ফুট পর্যন্ত বাড়তেন। যেখানে বর্তমানে জীবিত দীর্ঘতম স্থলচারী রেটিকুলেটেড অজগর লম্বা হয় মাত্র ২২.৮ ফুট! সরোপডগণের উচ্চতা ছিল ৬০ ফুট পর্যন্ত। এবং ওজনে ১২০ মেট্রিক টন পর্যন্ত ভারী ছিলেন। যেখানে এখনকার সবচেয়ে বড় স্থলচারী প্রাণী বুশ এলিফেন্টের ওজন ১০.৪ মেট্রিক টন এর বেশি নয়!
উনাদের গলা ছিল সবচেয়ে উঁচু গাছগুলোর চাইতেও উঁচু যা ৪৯ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতো। যেখানে আজকের জিরাফের গলার উচ্চতা সর্বোচ্চ ১৬-১৮ ফুট। লম্বা গলা হওয়ার কারণে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য লেজটাও অনেক লম্বা হতো। লেজে অতিরিক্ত এক থেকে তিনটি পুচ্ছ কশেরুকা ছিল। শত্রুকে নিরস্ত করতে উনারা লেজকে চাবুকের মতো ব্যবহার করতেন।
কিছু সরোপডগণের ঘাড়ে ১৯ টি পর্যন্ত গ্রীবা কশেরুকা ছিল, যেখানে প্রায় সব স্তন্যপায়ীদের গ্রীবা কশেরুকা মাত্র ৭ টি। ঘাড়ের ওজন কমানোর জন্য কশেরুকাগুলো দীর্ঘ ও ফাঁপা ছিল। ফলে উনারা শ্বাসনালী দিয়ে প্রচুর অক্সিজেন নিতে পারতেন। কশেরুকাগুলোর সারি নীল তিমির চেয়েও লম্বা ছিল। আর ছিল কয়েকটা পাঁজর। উরু থেকে পা ছিল পাঁচ ফুট লম্বা। সরোপডগণ ঘাড় বাঁকাতে পারতেন কি না জানা যায়নি।
বড় দেহ থেকে বিপাক ক্রিয়ায় উৎপন্ন তাপ বিকিরণ করার জন্যে লম্বা ঘাড় রেডিয়েটরের মতো কাজ করত। আবার দীর্ঘ ঘাড়ের কারণে ধমনী ও শিরার মধ্য দিয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছার আগে রক্তও যথেষ্ট শীতল হয়ে যেত।
বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছেন যে এই বিশাল লম্বা গলার ওপর বসানো মাথায় রক্ত পাম্প করতে হলে কমপক্ষে ৭০০ mmhg প্রেশার দিতে হবে। এবং এই বিপুল পরিমাণ প্রেশার দেওয়ার মতো সক্ষম একটি হার্টের ওজন হতে হবে কমপক্ষে ২ টন। মাথা ছিল শরীরের তুলনায় অনেক ছোট। মাথার দুপাশে দুটো চোখ ছিল। অনেক সরোপডদের বড় নাক ছিল, এর ডগায় একটা করে শিং থাকত, অনেকটা গণ্ডারের শিং এর মতো যা শত্রুর থেকে আত্মরক্ষায় কাজ দিত । অবশ্য সরোপডদের আত্মরক্ষার প্রধান সুবিধা ছিল উনাদের বিশাল আয়তন। উনাদের মুখের উপরের দিকটা সামনে ঝুঁকে এসে চঞ্চুর মতো আকৃতি নিয়েছিল।
সরোপডদের মধ্যে দুই ধরণের দাঁত দেখা যায়। পেন্সিলের মতো সূচালো শেইপ (peg-like tooth)।
এবং পাতার মতো শেইপ (spatulate tooth)। একে চমসাকার শেইপও বলা যায়।
উনাদের দাঁত খুব একটা শক্তিশালী ছিল না।
দাঁত পড়ে গেলে প্রজাতিভেদে ১৪ থেকে ৬২ দিনের মধ্যে নতুন দাঁত গজাত।
সরোপডরা মোটা খাম্বার মতো চারটি পা দিয়ে ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটার বেগে চলতে পারতেন। পেছনের পা দুটো ছিল ভারী এবং শক্তিশালী। বেশিরভাগ প্রজাতির পেছনের পায়ের তিনটি আঙুলে নখর ছিল। সে তুলনায় সামনের পা ছোট ছিল এবং আঙ্গুলের হাড়গুলোও চিকন ছিল।
প্রাথমিকভাবে দুপেয়ে হলেও দেহের ভর বেড়ে ওঠার সাথে সাথে সরোপডরা হাতির মতো অভিকর্ষানুবর্তী চতুষ্পদ দেহগঠন লাভ করেন, অর্থাৎ গমনের সময় উনাদের চারটে পা-ই সব সময় দেহের ঠিক নিচে অবস্থান করে অল্প অল্প করে সামনে এগিয়ে যেত। ফলে উনারা স্থায়ীভাবে অত্যন্ত ধীর হয়ে যান। অস্ট্রেলিয়ার কিম্বার্লি অঞ্চলের ওয়ালমাদানিতে সরোপডের প্রায় ৫.৫ ফুট দীর্ঘ পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে যা এখন পর্যন্ত যেকোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ।
ট্রায়াসিক যুগ চলছে। বর্তমান আর্জেন্টিনার আউকা মাহুয়েভোর বালিতে পা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে ৪০ টি ডিম পেড়েছেন এক স্ত্রী সরোপড। তারপর ডিমগুলো গাছপালা আর আবর্জনা দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। ডিমগুলো উটপাখির ডিমের চেয়ে একটু বড়। ভেতরে ৫.৫ লিটার মালমশলা আছে। এই ডিম ফুটে বাচ্চা বেরুতে ৬৫ থেকে ৮২ দিন অপেক্ষা করতে হবে। সময় কেটে যায়। ডিম ফুটে বেরিয়ে আসে এক মিটারের মতো লম্বা আর পাঁচ কেজি ওজনের সমান বাচ্চা সরোপড।
ওদের জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর এক পৃথিবী। আকাশে বিশাল ডানা মেলে উড়তে থাকা চতুর টেরোসরদের লোভাতুর দৃষ্টি বাচ্চা সরোপডগুলির দিকে। মাটিতে চল্লিশ ফুট লম্বা ম্যাপাসুরাস মাঝেমধ্যেই উঁকি মারে, সে জানে, সরোপডের বাচ্চার রোস্ট কত টেস্টি। মা সরোপড সন্তানদের বুকে আগলে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু লাভ হয় না, মাটিতে শত্রু, আকাশে শত্রু। কয়টাকে ঠেকাবেন তিনি? এরকম নানা প্রতিকূলতা জয় করে ভাগ্যের ফেরে শেষমেশ গড়ে একটা বাচ্চা টিকে থাকে। দেখা যাক তার বেঁচে থাকার জন্য কী কী মৌলিক চাহিদা লাগবে…
সরোপডদের মৌলিক চাহিদা:
খাদ্যঃ
বেঁচে থাকার জন্য প্রধান মৌলিক চাহিদা হলো খাদ্য। পাঁচ কেজি সাইজের একটা বাচ্চা থেকে মাত্র ত্রিশ বছর বয়সেই ১ হাজার গুণ বেড়ে একেকটা সরোপড প্রকাণ্ড হয়ে যেতেন। ইতিহাসে কখনো অন্য কোনো প্রাণীর শরীরে এত দ্রুত বৃদ্ধি ঘটেনি। প্রথম ২০ বছর প্রতি বছর অন্তর উনাদের শরীর ২ টন করে বৃদ্ধি পেত। প্রাপ্তবয়স্ক হতে হতেই চল্লিশ বছর কেটে যেত। ভাবা যায়?
সরোপডরা মূলত ছিলেন তৃণভোজী। শেকড় থেকে শুরু করে উঁচু মগডালের পাতা, কোমল তৃণলতা থেকে শুরু করে শক্ত গাছ, কোনোকিছুই উনাদের খাদ্যতালিকা থেকে বাদ যেত না। প্রধান খাদ্য ছিল কনিফার। ছিল ক্লাব মস নামের একধরনের শ্যাওলা, গিঙ্গোর ঝোপ। নানান জাতের আর রঙের ফার্ন যেমন ট্রি ফার্ন, লতানো ফার্ন, আগাছার মতো সাইকাসের গা বেয়ে গজিয়ে ওঠা ফার্ন। ঘোড়ার লেজের মতো দেখতে হর্সটেইলস। শেষ ক্রেটাসিয়াস পিরিয়ডে প্রথম গাছেরা ফুল ফল দিতে শুরু করে। তখন ফুলগাছ, মনিরাজ গাছ, বেনেট্টিট্যালস নামের একধরনের বীজওয়ালা উদ্ভিদ এগুলো উনাদের খাদ্যতালিকায় যোগ হয়।
সরোপডদের প্রতিদিন এক লক্ষ ক্যালরি প্রয়োজন হতো। যা ৫০ টা চকোলেট কেক বা ২,১২৭ টা আপেলের সমান। জীবাশ্মবিদরা মনে করেন উনারা গাছপালা না চিবিয়ে পুরোটা গিলে ফেলতেন, তারপর পেটের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এগুলো হজম হত।
পেষক দাঁতের বদলে উনাদের পাকস্থলীতে থাকত গ্যাস্ট্রোলিথ জাতীয় পাথর, যা আজকের যুগের পাখি ও কুমিরদের গিজার্ড পাথরের মতোই। খাদ্যকে পরিপাকের উপযোগী করে তোলাই ছিল এগুলোর কাজ।
প্রথমদিকের সরোপডরা খুব সম্ভবত সর্বভুক ছিলেন। তৃণভোজী খাদ্যাভ্যাসের বিবর্তন উনাদের লম্বা গলা ও দেহের আয়তনের বিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলছিল। সরোপডরা সমসাময়িক অন্যান্য তৃণভোজীদের চেয়ে বেশি উঁচুতে গলা বাড়িয়ে গাছের পাতা চিবোতে পারতেন।
বস্ত্রঃ
সরোপডদের বর্মের মতো শক্ত চামড়া ছিল। শুকনো এবং উষ্ণ চামড়ায় কোনো ঘামগ্রন্থি ছিল না। তার মানে উনারা ঘামতেন না। অনেকের চামড়ায় ছোট ছোট আঁশ ছিল যা উনাদের দেহকে সুরক্ষিত রাখত এবং ভেতর থেকে পানি বাষ্প হওয়া রোধ করত। এখনকার কুমিরের মতো পিঠের চামড়ার ভিতর হাড়ের মতো শক্ত পাত ছিল যাকে বলে অস্টিওডার্মস। এগুলো ছিল বিশাল আকারের হাড়গোড়কে রক্ষা করার জন্য এবং ডিম উৎপাদন করতে প্রয়োজনীয় খনিজ সংরক্ষণের জন্য। উনারা লেজের মধ্যেও চর্বি জমা রাখতেন।
বাসস্থানঃ
উনাদের আদি নিবাস ছিল প্রাচীন মহাদেশ প্যাঞ্জিয়ায়। সরোপডরা শুষ্ক অঞ্চলে থাকতেন। বাসা বানিয়ে সবাই মিলেমিশে একসাথে বাস করতেন। প্রায় ১৭ কোটি বছর আগে জুরাসিক যুগে প্যাঞ্জিয়া মহাদেশ ভেঙে লরেশিয়া ও গন্ডোয়ানা মহাদেশের জন্ম হয়। আর ক্রেটাসিয়াস যুগে সরোপডরা সারা পৃথিবীর স্থলভাগে ছড়িয়ে পড়েন। তাই আজও অ্যান্টার্কটিকা সহ পৃথিবীর প্রতিটি মহাদেশে উনাদের ফসিল পাওয়া যায়।
শিক্ষাঃ
সরোপডেরা একতা, শৃঙ্খলা ও সহমর্মিতায় শিক্ষিত ছিলেন। সবসময় দল বেঁধে বনের মাঝে চষে বেড়াতেন। শত শত, এমনকি হাজার হাজার পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে যা প্রমাণ করে সরোপডেরা আধুনিক আমেরিকান বাইসন বা আফ্রিকান স্প্রিংবক হরিণের মতো বিশাল বিশাল দল নিয়ে চলাফেরা করতেন। সরোপডদের পায়ের ছাপের নিদর্শন প্রমাণ করে উনাদের একাধিক প্রজাতির সদস্যরা কখনও কখনও একই দলের অন্তর্ভুক্ত থাকতেন!
দলবদ্ধ জীবনযাত্রার কারণ হতে পারে আত্মরক্ষা, লম্বা জার্নি (পরিযায়ী পাখিদের মতো) অথবা শাবকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। অল্পবয়স্ক ডাইনোসরেরা যে অনেক ক্ষেত্রে আলাদা দল তৈরি করে থাকতেন তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। উদাহরণ হিসেবে মঙ্গোলিয়ায় প্রাপ্ত ২০ টি ১ থেকে ৭ বছর বয়স্ক সিনর্নিথোমিমাসের জীবাশ্মের কথা বলা যায়। উনারা কাদায় আটকা পড়ে মারা গিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
চিকিৎসাঃ
দুর্ভাগ্যবশত, সরোপডরা উনাদের ইমিউন সিস্টেমের যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল সেটা ছাড়া আর অন্য কোনো ট্রিটমেন্ট পাননি। উপরন্তু উনাদের উপর নানা রকম বিপদ আপদ এসে হানা দিচ্ছিল। ক্রেটাসিয়াস পিরিয়ডে মহাদেশগুলো বেশ কয়েকটি খণ্ডে বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বিচ্ছিন্ন মহাদেশগুলোর আবহাওয়ায় পরিবর্তন ঘটে। পৃথিবীর মহাদেশগুলো বিচ্ছিন্ন হওয়ার সাথে সাথে উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলও বিভক্ত হয়েছিল। ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশের আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্যও একই রকম ছিল না।
সাধারণ পরিবেশে যখন সুস্থ-সবল সরোপডরা বিচরণ করতেন, তখন উনাদের উপর ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসগুলো ততটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। কিন্তু বৈরী পরিবেশের কারণে উনাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে গিয়েছিল।
তাছাড়া আবহাওয়াগত পরিবর্তনের কারণে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসদের আক্রমণ করার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাচ্ছিল। সব মিলিয়ে সরোপডগণ দ্রুত রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছিলেন।
তারপরও সরোপডদের বংশের প্রদীপ নিভুনিভু করে জ্বলছিল। কিন্তু প্রায় ৬ কোটি বছর আগে চিক্সুলাব নামের ১১ থেকে ৮১ কিলোমিটার ব্যাসের একটি উল্কা একশটা আণবিক বোমার সমান শক্তি নিয়ে পৃথিবীতে আঘাত করে। সেই আঘাতে মেক্সিকোর চিক্সুলাব অঞ্চলে ১৮০ কিলোমিটার চওড়া গর্ত তৈরি হয়। উল্কার ধ্বংসাবশেষে বায়ুমণ্ডল ছেয়ে যায়। সূর্যের আলো বাঁধা পড়ে যায় সেই কালো ছাইমেঘে। ফটোসিন্থেসিস এর অভাবে গাছগুলো মারা যায়। ফলে না খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মারা যান তৃণভোজী সরোপডরা।
শেষে একটা ভালো খবর দেই, হাঁটু মোড়া অবস্থায় কিছু সরোপডের ফসিল পেয়ে এবং বর্তমান প্রাণীগুলির অভ্যাস পর্যালোচনা করে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে সরোপডরা হাঁটু মুড়ে ঘুমাতেন। এভাবেই হাঁটু মুড়ে ঘুমন্ত ইতিহাসের বাঁকে অনন্তকাল শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকুক বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া সব জীববৈচিত্র্য। বিবর্তনের জোয়ার-ভাটায় প্রাণ হয়ে উঠুক আরো বৈচিত্র্যম। পৃথিবী হোক সমৃদ্ধ।
সোর্স-
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Argentinosaurus
https://www.nhm.ac.uk/discover/dino-directory/argentinosaurus.html
https://www.bbcearth.com/walking-with-dinosaurs/modal/argentinosaurus
https://www.livescience.com/34278-worlds-largest-dinosaur.html
https://www.amnh.org/explore/news-blogs/news-posts/fossil-titanosaur-egg-with-embryo-still-inside
https://dinopedia.fandom.com/wiki/Category:Sauropods
এ আর মুবিন,
ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান