Ads Area

advertise

উচ্চরক্তচাপ (Hypertension)

0
লেখক : মুশফিক ইমতিয়াজ চৌধুরী 

প্রশ্নঃ উচ্চরক্তচাপ বলতে আমরা কী বুঝি?

উত্তরঃ 
০১) সাধারণভাবে, যদি কোনোও একজনের হৃদ-সংকোচন বা সিস্টোলিক রক্ত চাপ উভয় বাহুতে ১৪০ মি.মি. পারদ অথবা এর ওপরে থাকে এবং হৃদ-প্রসারণ বা ডায়াস্টোলিক চাপ ৯০ মি.মি পারদ অথবা এর উপরে থাকে,তাহলে তাকে উচ্চ রক্ত চাপ বলা হয়। 

০২) সিস্টোলিক রক্তচাপ ১২০ থেকে ১৩৯ এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৮০-৮৯ এর মধ্যে থাকলে একে প্রি-হাইপারটেনশন বা প্রাক-উচ্চরক্তচাপ বলা হয়। 

০৩) তবে ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ ও হৃদরোগের রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে ১৩০/৮০ এর ওপরে রক্তচাপ গেলেই তাকে উচ্চরক্তচাপ হিশেবে বিবেচনা করা এবং এর দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। 

০৪) চিকিৎসকের চেম্বারে গেলে ভয় ও উদ্বিগ্নতা থেকে অনেকের রক্তচাপ বেড়ে যায় যাকে White coat hypertension বলা হয়। ফলে বিভ্রান্তি দূর করার জন্য বাসায় বসেই রক্তচাপ মেপে অতঃপর চিকিৎসকের চেম্বারে যেয়ে পুনরায় মাপানো উচিত এবং উভয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য আসে কী না বা আসলে কত পরিমাণ পার্থক্য আসে, সেটা বুঝে রোগীর উচ্চরক্তচাপ আছে কীনা তা নির্ণয় করা উচিত।  

প্রশ্নঃ কখন ও কিভাবে উচ্চরক্তচাপ শনাক্ত করা হয়?

 উত্তরঃ  
১) কোনো রোগ না থাকা অবস্থাতেই রক্তচাপ যখন ১৪০/৯০ mm Hg বা এর চেয়েও বেশি হয়।

০২) হৃদরোগ হওয়ার রিস্ক ফ্যাক্টর আছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে রক্তচাপ যখন ১৩০/৮০ mm Hg বা এর চেয়েও বেশি হয়। 

০৩) আচমকা বা হঠাৎ হঠাৎ নয় বরং লাগাতারভাবে ১৩০/৮০ (হৃদরোগ হওয়ার রিস্ক ফ্যাক্টর আছে এমন রোগী) এবং ১৪০/৯০ mm Hg (হৃদরোগের রিস্ক ফ্যাক্টর নেই এমন রোগী) থাকলে আমরা একে উচ্চরক্তচাপ বলে অভিহিত করি। 

০৪) সাধারণভাবে রক্তচাপ ১৪০/৯০ হলে ১টি ঔষধ, ১৬০/৯০ এর বেশি হলে একাধিক ঔষধ, ১৮০/১০০ এর বেশি হলে ৩টি বা তদূর্ধ্ব ঔষধ দিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ বাঞ্ছনীয়।

প্রশ্নঃ উচ্চরক্তচাপ দিনের কোন সময়টায় সাধারণত বেশি থাকে?

উত্তর:
০১) উচ্চরক্তচাপ, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক মূলতঃ ঘুম থেকে ওঠার পর বা দিনের প্রথমভাগেই বেশি দেখা যায়

০২) দিনের তুলনায় রাতে রক্তচাপ ১০-২০% কম থাকে।

০৩) গ্রীষ্মকালের তুলনায় শীতকালে রক্তচাপ বেশি থাকে।

প্রশ্নঃ উচ্চরক্তচাপ কাদের বেশি হয়?

উত্তরঃ 
০১) বয়স বাড়ার সাথে সাথে উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে, মধ্যবয়সের শুরুতে (পুরুষ), মাসিক বন্ধের পর (নারী)।

০২) পরিবারে উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস থাকলে। 

০৩) ব্যক্তি স্থূল বা অতিরিক্ত ওজনসম্পন্ন হলে। 

০৪) শারীরিক কাজকর্ম বা শরীরচর্চা কম করলে 
০৫) ধূমপান ও মদ্যপানকারীদের মধ্যে  
০৬) খাদ্যে অতিমাত্রায় লবণ ব্যবহার করলে 
০৭) ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ডি গ্রহণের স্বল্পতা থাকলে 
০৮) একাকীত্ব, নিঃসঙ্গতা, বিষণ্ণতা, মানসিক চাপ বা স্ট্রেস থেকে
০৯) উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল, লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন ও ট্রাইগ্লিসারাইড থাকলে
১০) ডায়াবেটিস, অ্যাডরেনাল গ্রন্থি, থাইরয়েড গ্রন্থি ও কিডনীর সমস্যা থাকলে 
১১) ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া রোগীদের মধ্যে 
১২) গর্ভকালীন সময়ের উচ্চরক্তচাপ
১৩) জন্মবিরতকরণ পিল সেবনকারীর মধ্যে
১৪) ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় - চা/কফি/কোল্ড ড্রিংকস/এনার্জি ড্রিংকস ইত্যাদি নিয়মিতভাবে গ্রহণ করলে
১৫) জেনেটিক্যাল ও পারিবারিক ইতিহাসগত কারণ

১৬) ঔষধগতঃ
✳ ক) জন্মবিরতিকরণ পিল সেবনকারীঃ OCP
✳ খ) খুশখুশে কাশিরোধক ঔষধঃ Dextromethorphan
✳ গ) নাকবদ্ধতারোধী ঔষধঃ Decongestants
✳ ঘ) ব্যথানাশক ঔষধঃ NSAIDS. Steroids
✳ ঙ) অবৈধ ঔষধঃ Cocaine, Amphetamine
✳ চ) আর্সেনিক বিষক্রিয়াঃ (Arsenic Poisoning)
✳ ছ) ভেষজ ঔষধঃ Panax Ginseng, Yohimbine, Liquorice

প্রশ্নঃ কি কি অসুখ থেকে উচ্চরক্তচাপ হতে পারে?

উত্তরঃ 

✳ ক) রেচনতন্ত্রের অসুখ (Renal)
০১) Parenchymal diseases
০২) renal cysts (including polycystic kidney disease)
০৩) renal tumors (including renin-secreting tumors)
০৪) obstructive uropathy

✳ খ) রেচন সংবহনতন্ত্রের অসুখ (Renovascular
০১) Arteriosclerotic
০২) fibromuscular dysplasia

✳ গ) অ্যাডরেনাল গ্রন্থির অসুখ (Adrenal)
০১) Conn’s Syndrome or Primary aldosteronism
০২) Cushing’s syndrome
০৩) 17α-hydroxylase deficiency
০৪) 11β-hydroxylase deficiency
০৫) 11-hydroxysteroid dehydrogenase deficiency (licorice)
০৬) pheochromocytoma

✳ ঘ) স্নায়ুতন্ত্র সংশ্লিষ্ট রোগ (Neurogenic)
 ০১) Psychogenic
 ০২) diencephalic syndrome
 ০৩) familial dysautonomia
 ০৪) polyneuritis (acute porphyria, lead poisoning)
 ০৫) acute increased intracranial pressure 
 ০৬) acute spinal cord section

✳ ঙ) চোখ সংশ্লিষ্ট রোগ (Eye diseases)
 ০১) Hypertensive retinopathy
 ০২) Choroidopathy
 ০৩) Optic neuropathy

✳ চ) অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি সংশ্লিষ্ট রোগ (Miscellaneous endocrine)
 ০১) Hypothyroidism
 ০২) hyperthyroidism
 ০৩) hypercalcemia or hyperparathyroidism
 ০৪) acromegaly

✳ ছ) অন্যান্য (Miscellaneous)
 ০১) Aortic coarctation
 ০২) Obstructive sleep apnea
 ০৩) Preeclampsia/eclampsia

✳ জ) ঔষধগত (Medications)
 ০১) High-dose estrogens
 ০২) adrenal steroids
 ০৩) decongestants
 ০৪) appetite suppressants 
 ০৫) cyclosporine
 ০৬) tricyclic antidepressants
 ০৭) monoamine oxidase inhibitors
 ০৮) erythropoietin
 ০৯) nonsteroidal anti-inflammatory agents
 ১০) cocaine

✳ ঝ) জেনেটিক রোগ (Mendelian forms of hypertension)
 ০১) Glucocorticoid-remediable hyperaldosteronism 
 ০২) 17α-hydroxylase deficiency
 ০৩) 11β-hydroxylase deficiency
 ০৪) 11β-hydroxysteroid dehydrogenase deficiency (apparent mineralocorticoid excess syndrome)
 ০৫) Liddle’s syndrome
 ০৬) Pseudohypoaldosteronism type II (Gordon’s syndrome) 
 ০৭) Hypertension exacerbated in pregnancy 
 ০৮) Polycystic kidney disease
 ০৯) Pheochromocytoma

 প্রশ্নঃ উচ্চরক্তচাপের উপসর্গ কী কী?

 উত্তরঃ 

উচ্চরক্তচাপকে ‘Silent killer’ বা নীরব ঘাতক বলা হয় কেননা এর কোনো পূর্বাভাসমূলক চিহ্ন বা উপসর্গ (no warning signs or symptoms) দেখা যায় না। এজন্য সকলেরই নিয়মিতভাবে রক্তচাপ মাপা উচিত। তবে একান্তই যদি উপসর্গ দেখা যায় তবে সেগুলো হলঃ

✳ ক) মৃদু থেকে মধ্যম উচ্চরক্তচাপের ক্ষেত্রেঃ
০১) সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার পরপর মাথাব্যথা
০২) নাক দিয়ে রক্ত পড়া 
০৩) অনিয়মিত হৃদস্পন্দন 
০৪) দৃষ্টিসমস্যা
০৫) কানে শব্দ শোনা

✳ খ) তীব্র উচ্চরক্তচাপের ক্ষেত্রেঃ
০১) ক্লান্তি
০২) বমিভাব ও বমি
০৩) বিভ্রান্তি ও ধাঁধা লাগা
০৪) উদ্বিগ্নতা
০৫) বুক ব্যথা
০৬) মাংশপেশীর কম্পন 

প্রশ্নঃ কীভাবে উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধ করবেন?

উত্তরঃ
ক) খাদ্যলবণ গ্রহণ কমাতে হবেঃ 
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন মোতাবেক প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রাম বা ১.৫ গ্রামের কম পরিমাণ সোডিয়াম গ্রহণ করতে হবে যা পৌনে ১ চা-চামচ থেকে একটু কম। উল্লেখ্য, ১ চা-চামচ লবণে ২৪০০ মিলিগ্রাম বা ২.৪ গ্রাম সোডিয়াম থাকে
আপাত দৃষ্টিতে এই কাজটি সোজা মনে হলেও আসলে সোজা নয় কেননা বিভিন্ন খাবারেই কিছু পরিমাণ সোডিয়াম লুক্কায়িত থাকে। ফলে শুধুমাত্র খাদ্যলবণ থেকে সোডিয়ামের হিশেব করা যাবে না। 

খাদ্যগ্রহণে লবণের পরিমাণ কমানোর উপায় –

০১) আলগা লবণ খাবেন নাঃ লবণদানী হাতের নাগাল থেকে সরিয়ে ফেলুন
০২) কাঁচা লবণের পাশাপাশি ভাজা লবণেও সোডিয়াম থাকে এবং এর গুণ নষ্ট হয় না বলে উভয় প্রকার লবণ গ্রহণই সীমিত রাখতে হবে
০৩) টমেটো সস, টমেটো কেচাপ, সয়াসস, বিভিন্ন ধরনের স্যুপ, বিটলবণ, টেস্টিং সল্ট, মেয়োনিজে প্রচুর পরিমাণ লবণ দেওয়া থাকে বলে এগুলো গ্রহণ সীমিত করতে হবে
০৪) বাসায় রান্না কিংবা প্রাকৃতিক খাবার যেমন চিংড়ি, পনির, আচার, ভর্তা ইত্যাদিতে লবণ থাকে বলে এগুলো গ্রহণ সীমিত করতে হবে, ফল যেমন আমড়া ও কামরাঙ্গা লবণ দিয়ে মাখিয়ে না খাওয়াই উত্তম। 
০৫) বাইরের খাবার তথা ফাস্ট ফুড শপ, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, টং দোকান ইত্যাদির খাবার এড়িয়ে চলবেন কেননা তারা তাদের খাবারে কতটুকু লবণ দিচ্ছে তা আপনার জানা নেই এবং মুখরোচকতা সৃষ্টির জন্য তারা বেশি লবণ দিয়েই এসব খাবার তৈরি করে থাকে
০৬) চিপস, নুডলস (মশলা), সিঙ্গারা, সমুসা, পুরি, স্যান্ডউইচ, বার্গার, পিজা, হটডগ ইত্যাদি গ্রহণ যতটা সম্ভব সীমিত রাখতে হবে 
০৭) রান্নার সময় উচ্চরক্তচাপের কথা চিন্তা করে রান্না করার মানসিকতা কাজ না করলেও এই মানসিকতা রেখেই রান্নায় লবণ দিতে হবে 
০৮) বিয়ের দাওয়াত, বনভোজন ইত্যাদি অনুষ্ঠানে কম কম যাওয়া উচিত কেননা এসব অনুষ্ঠানের খাবারে মুখরোচকতা সৃষ্টির জন্য বাবুর্চি অত্যাধিক লবণ ও তেল দিয়ে রান্না করে থাকে) 
০৯) বোতল বা ক্যানে ভরা প্রক্রিয়াজাত খাদ্য (Processed or Canned Food) যতটা সম্ভব পরিহার করতে হবে, বিশেষত টমেটো ও টুনা মাছ দিয়ে বানানো ফুড প্রোডাক্ট। বোতলের গায়ে লবণের পরিমাণ দেখে নিতে হবে।
১০) নিয়মিতভাবে সালাদের ড্রেসিং গ্রহণ (লবণ) ও ফ্রাই করা খাদ্য গ্রহণ (লবণের অতিঘনত্ব) কমাতে হবে। 
১১) লবণের ব্যাপারটি মশলা, ভেষজ, ভিনেগার, লেবু ও আসল ফলের জুস দিয়ে পূরণের চেষ্টা করতে হবে
এবার আসুন জেনে নেই ব্যতিক্রমগুলো। 

সাধারণভাবে লবণ গ্রহণের মাত্রা সীমিত রাখলেও নিম্নোক্ত ৩টি ক্ষেত্রে লবণ গ্রহণ খুব বেশি সীমিত করা যাবে না -
০১) প্রস্রাব দিয়ে পানি বের করে দেওয়া (Diuretic) গ্রুপের ঔষধ সেবনকারীদের যেমন Fusid, Lasix 
০২) ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতার রোগীদের যেখানে সোডিয়ামের পরিমাণ কম (Hyponatremia) 
০৩) ডায়াবেটিস রোগীদের (Diabetes)
০৪) বদ্ধতাজনিত হৃদবৈকল্যে আক্রান্ত রোগীদের (Congestive/Right Heart Failure)

✳ খ) তেল ও চর্বিজাতীয় খাদ্যগ্রহণ কমাতে হবে তথা ওজন ঠিক রাখতে হবেঃ রান্নায় মোটামুটিভাবে ২ থেকে ৩ চা-চামচের বেশি তেল ব্যবহার করা উচিত নয়। 
তেল ও চর্বিজাতীয় খাদ্যগ্রহণ কমানোর উপায়ঃ
০১) তেল ঢালার সময় টেবিল-চামচের বদলে চা-চামচ ব্যবহার করা উচিত কিংবা বাজারে লভ্য পরিমাণ মার্ক করা আছে এমন তেলের জার ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়
০২) বাজার থেকে চর্বিহীন গরু ও খাসীর মাংস এবং চামড়াহীন মুরগীর মাংস কেনা উচিত 
০৩) ঘি, মাখন, দুধের সর, মাঠা, মার্জারিন, ক্রিম স্প্রেড ও ফাস্টফুড গ্রহণ অত্যন্ত সীমিত করতে হবে
০৪) ফুল ক্রিম ও চা-কফির জন্য বিশেষায়িত উচ্চ-মাত্রার ফ্যাটবিশিষ্ট দুধের বদলে ফ্যাট-ফ্রি বা স্কিমড মিল্ক গ্রহণ করতে হবে 
০৫) মিষ্টি দইয়ের বদলে টক দই গ্রহণ করতে হবে যার পরিমাণ হবে ২-৩ কাপ (১ কাপ ২৫০ মিলিলিটার হিশেবে)
০৬) ডিমভাজিতে ১-২ চা-চামচের বেশি তেল দেওয়া যাবে না। তাই ভাজি ও ডিম পোঁচ থেকে ডিম সিদ্ধ অধিকতর উপকারী। ডিমের কোলেস্টেরল ক্ষতিকর নাকি ক্ষতিকর নয় এই নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বলে এটি পরিহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। 

✳ গ) চিনি জাতীয় খাদ্যগ্রহণ কমাতে হবেঃ চিনি চর্বির শোষণে সাহায্য করে, ফলে ওজন বেড়ে যায়। 
চিনিজাতীয় খাদ্যগ্রহণ কমানোর উপায়ঃ
০১) সপ্তাহে ২-৫ টেবিল-চামচের কম চিনি গ্রহণ করা আবশ্যক
০২) কোল্ড ড্রিংকস পরিহার করতে হবে। উল্লেখ্য, ৬০০ মিলি কোকাকোলাতে ৫ টেবিল চামচেরও বেশি চিনি থাকে
০৩) টমেটো কেচাপ ও আচারে লবণের পাশাপাশি অত্যাধিক চিনি থাকে বলে এসব গ্রহণ সীমিত করতে হবে
০৪) চিনির বিকল্প হিশেবে Sucralose or Stevia or Acesulfame potassium গ্রুপের কৃত্রিম মিষ্টিকারক ব্যবহার করা উচিত। Sugar Alcohol (Arabitol, Erythritol, Glycerol, HSH, Isomalt, Lactitol, Maltitol, Mannitol, Sorbitol, Xylitol) অতটা মিষ্টিকারক নয় বলে এগুলোর প্রচলন কম। উল্লেখ্য, Sodium cyclamate, Saccharine, Aspartame এগুলো ব্যবহার না করাই ভালো কেননা এগুলোর পক্ষে ও বিপক্ষে – উভয় দিকেই মত রয়েছে। 

✳ ঘ) ধূমপান, মদ্যপান ও ক্যাফেইন গ্রহণ কমাতে হবেঃ
০১) ধূমপানঃ রক্তনালিকাগুলো দুর্বল ও অস্থিতিস্থাপক করে দিয়ে রক্তনালিকার রোগ সৃষ্টি করে
০২) মদ্যপানঃ মদ্যপান ১৪-২৮ গ্রাম ইথানল মাত্রার নীচে রাখতে হবে। একটি স্ট্যান্ডার্ড ড্রিংকে ১৪ গ্রাম ইথানল থাকে। মদ্যপায়ী না হলে মদ্যপান শুরু করা যাবে না। পক্ষান্তরে, একান্তই মদ্যপায়ী হলে মহিলাদের ক্ষেত্রে দিনে ১ পেগ ও পুরুষদের ক্ষেত্রে দিনে ২ পেগ পরিমাণ হচ্ছে মদ্যগ্রহণের সর্বোচ্চ সীমা। 
০৩) ক্যাফেইনঃ চা, কফি, কোল্ড ড্রিংকস 
✳ ঙ) বিশেষ ক্ষেত্র - প্রোটিন গ্রহণ কমাতে হবেঃ 
শুধুমাত্র ক্রনিক কিডনী ডিজিজ বা ক্রনিক রেনাল ফেইল্যুরে আক্রান্ত রোগীদের প্রোটিন গ্রহণ সীমিত করতে হবে - যা সাধারণ ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য নয়।  
✳ চ) নিয়মিত শরীরচর্চা ও কায়িক পরিশ্রম করে সক্রিয় জীবনযাপন করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে
✳ ছ) পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঔষধের মাধ্যমে দুশ্চিন্তা, হতাশা, বিষণ্ণতা ও অতিরিক্ত চাপ থেকে নিজেকে যতটা সম্ভব মুক্ত রাখতে হবে
✳ জ) নিয়মিতভাবে রক্তচাপ মেপে ব্যক্তিগত রক্তচাপের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে এবং অবস্থা বুঝে দ্রুত ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
✳ ঝ) স্বাস্থ্যসম্মত খাবার যেমন- ফলমূল, শাকসব্জি, শস্যদানা এবং কম চর্বিযুক্ত খাবার খেতে হবে 

প্রশ্নঃ উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে কী কী খেতে পারেন? 

 উত্তরঃ 

০১) উচ্চ পটাসিয়ামযুক্ত খাবারঃ 
✳ ক) শস্য ও সবজীঃ প্রতিদিন ২ থেকে ২.৫ কাপ কাঁচা বা রান্না করা সবজি খাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে ভাতের বদলে সবজীর পরিমাণ বেশি হওয়া উচিত।  
উদাহরণঃ পালং শাক, ব্রকোলি, আলু, মিষ্টি আলু, মাশরুম, লবণহীন ও ভাজা নয় এমন ধরনের বাদাম - চিনাবাদাম, অ্যালমন্ড, কাজু, পেস্তা, শসা, মিষ্টি কুমড়া, ঝোলাগুড়, বাদাম, বাদামী চাউল, টমেটো, বীট, দই, সূর্যমুখী বীজ, মসুর ডাল, পাস্তা, রসুন, পেয়াজ, হলুদ, কালোজিরা, পোস্তদানা, কারিপাতা, ধনেপাতা, আদার রস, দারচিনি  
✳ খ) প্রাণিজ খাদ্যঃ সাধারণ নয় বরং তৈলাক্ত মাছ
উদাহরণঃ টুনা, হ্যালিবাট, কড, স্যালমন মাছ, লাল মাংস, চামড়া/চর্বিহীন টার্কি ও মুরগীর মাংস 
✳ গ) ফলমূলঃ প্রতিদিন সকালে নাস্তার পরে ও বিকেলে ৩+২ করে ৪-৫টা মাঝারি আকারের ফল খাওয়া অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
বাংলাদেশেঃ তেতুল, পেয়ারা, কলা, ডালিম, চেরি, কমলা, লিচু, আম, পেপে, স্ট্রবেরি, কাঁঠাল, সফেদা, খেজুর, কিশমিশ, আলুবোখারা, ডাবের পানি, তরমুজ   
বাংলাদেশের বাইরেঃ অ্যাভোক্যাডো, কিউয়ি, ক্যান্টালুপ, অ্যাপ্রিকট, হানিডিউ মেলন, গ্রেপফ্রুট, ট্যাঞ্জেরিন, নেকট্যারিন, মালবেরি, পার্সিমন, প্লাম, ব্ল্যাকবেরি, প্যাশনফ্রুট, সাওয়ারসপ, চেরিমোয়া, এলডারবেরি, লোকুয়াটস
০২) নিজে নিজে পটাসিয়াম সাপলিমেন্ট গ্রহণ ক্রনিক কিডনী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এবং হৃদযন্ত্রের জন্য বিপদজনক হতে পারে তবে মিনি-স্ট্রোক বা স্ট্রোকের ব্যাপারটি নিশ্চিত হলে অতঃপর এটি শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শে সেবন যুক্তিযুক্ত। ক্রনিক কিডনী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে পটাসিয়াম বেড়ে যেয়ে হৃদবৈকল্য সৃষ্টি করতে পারে বলে পটাসিয়াম ও প্রোটিন কম করে খেতে হবে। 
০৩) নাইট্রেট সমৃদ্ধ শুধুমাত্র উদ্ভিদজাত খাদ্য রক্তনালিকার প্রসারণ ও স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর মাধ্যমে মাংসপেশী ও শরীরচর্চার সক্ষমতা বাড়ায় ও রক্তচাপ কমায়।
নাইট্রেট সমৃদ্ধ উদ্ভিদজাত খাদ্যের উদাহরণঃ
পালং শাক, লাল বীট, গাজর, বাঁধাকপি, ব্রকোলি, বেগুন, রশুন, পার্সলে ও লেটুস পাতা, শালগম ও রেউচিনি
০৪) উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধে মনো-আনস্যাচুরেটেড ও পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড পরিপূর্ণ ক্যানোলা অয়েল দিয়ে রান্না করা সবচেয়ে উপকারী, এর পরের অবস্থানে আছে অলিভ অয়েল। নারিকেল তেলে ৮২% স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকার কারণে এটি উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।  
০৫) DASH Diet অনুসরণ করলে গড়ে নিদেনপক্ষে ১১ মিমি রক্তচাপ কমে কিন্তু ভুলেও Keto Diet or Atkins Diet করা যাবে না। কিটো ডায়েট  হৃদযন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে দ্রুত ওজন কমলেও এটি হৃদরোগ সৃষ্টি করে বা ঝুঁকি বাড়ায় বলে পরিহার্য।  

DASH Diet নিয়ে বিস্তারিত জানতেঃ www.nhlbi.nih.gov/health-topics/dash-eating-plan

প্রশ্নঃ উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধে কী করবেন?

 উত্তরঃ 

০১) শরীরে বি এম আই এর মান ১৮.৫ থেকে ২৪.৯ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। 
✳ ক) BMI এর পূর্ণ রূপ হচ্ছে Body Mass Index। সোজা বাংলায় এটি শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী ওজনের অনুপাত যার ওপর ভিত্তি করে কাউকে রোগা বা মোটা বলা হয়। 
বিএমআই এর সমীকরণ হলঃ কেজিতে আপনার ওজন/মিটারে আপনার উচ্চতা এর বর্গ
ধরুন আপনার উচ্চতা ৫ ফিট ৭ ইঞ্চি এবং আপনার ওজন ৭০ কেজি। 
উচ্চতা মিটারে বের করবেন এভাবে – 
আপনার উচ্চতা ৫ ফিট ৭ ইঞ্চি = ৫x১২+৭" =৬৭ ইঞ্চি 
এখন, ১ ইঞ্চি = ২.৫৪ সেন্টিমিটার
ফলে ৬৭ ইঞ্চি = ৬৭x ২.৫৪ সেন্টিমিটার =১৭০.১৮ সেন্টিমিটার = ১.৭মিটার 
ফলে আপনার BMI = ৭০/১.৭x১.৭=২৪.২২
বিএমআই ক্যাটেগরী -
০১) ১৮.৫০ - ওজনহীনতা 
০২) ১৮.৫০ - ২৪.৯ স্বাভাবিক 
০৩) ২৫.০০ - ২৯.৯ ওজনাধিক্য 
০৪) ৩০.০০ - ৩৯.৯ স্থূলতা 
০৫) ৪০.০০ রোগগ্রস্ত চূড়ান্ত পর্যায়ের স্থুলতা

✳ খ) আদর্শ ওজন বা Ideal Weight হচ্ছে আপনার হাইটের তুলনায় আপনার ওজন এখন কত হওয়া উচিত তার পরিমাপ I এর সমীকরণ হচ্ছে –
সেন্টিমিটারের হিশেবে আপনার উচ্চতা – ১০০ = আপনার আদর্শ ওজন
ধরুন আপনার উচ্চতা ৫ ফিট ৬ ইঞ্চি = ৬৬ ইঞ্চি 
এখন, ১ ইঞ্চি = ২.৫৪ সেন্টিমিটার
ফলে ৬৬ ইঞ্চি = ৬৬ x ২.৫৪ সেন্টিমিটার =১৬৭.৬৪ সেন্টিমিটার 
ফলে আপনার ওজন হওয়া উচিত মোটামুটিভাবে ১৬৭.৬৪ - ১০০= ৬৭.৬৪ কেজি। 
সুতরাং বি এম আই এর মান জেনে আপনি আপনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। উল্লেখ্য, শরীরের পার্শ্বীয় অঙ্গগুলো অপেক্ষা মধ্যবস্থানে থাকা অঙ্গগুলোতে চর্বি বেশি থাকা বেশি বিপদজনক। 

০২) নিয়মিতভাবে সপ্তাহের অন্তত ৫ দিন অক্সিজেন সমৃদ্ধ পরিবেশে (বিশেষত ভোরবেলায় খোলা মাঠে) নিদেনপক্ষে মধ্যম মানের ২.৫ ঘণ্টা কিংবা উচ্চমানের ১.১৫ ঘণ্টা শরীরচর্চা করতে হবে। এতে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৫-৭ মিমি রক্তচাপ কমবে। উল্লেখ্য, শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপ দিয়ে অল্প সময়ে বেশি পরিমাণে শরীরচর্চা করা উচিত নয় বরং ধীরগতিতে কিন্তু নিয়মিতভাবে প্রতিদিন ৩০মিনিট (বয়স্ক) ও ১ ঘণ্টা(অল্প বা মধ্যবয়স্ক) শরীরচর্চা করা বুদ্ধিমানের কাজ। 

 ০৩) অবসর সময়ে অনুচ্চমাত্রায় গান শুনুন, যোগব্যায়াম কিংবা যে কোনো প্রকার স্বীকৃত মেডিটেশন করুন।

০৪) রাতে একটানা ৭ ঘণ্টা ঘুমানো বাঞ্ছনীয়। এজন্য দিনের বেলা প্রাকৃতিক আলোয় সহনীয় মাত্রার শরীরচর্চা বা কায়িক পরিশ্রমের মধ্যে থাকা উচিত যাতে রাতে আরামে ঘুম আসে। অল্প রাতেই ডিনার করে ফেলা উচিত। রাতের বেলার ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে ঘুমানোর সময় পর্যন্ত ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় এবং চিনি ও ফ্যাট বিশিষ্ট স্ন্যাকস গ্রহণ একেবারেই অনুচিত। প্রতিদিন একই সময়ে বিছানায় যাওয়া তথা ঘুমের সময় সুনির্দিষ্ট থাকা বাঞ্ছনীয়। ঘুমের কয়েক ঘণ্টা আগ পর্যন্ত শরীর চর্চা করা উচিত নয়। টিউবলাইট বা কৃত্রিম আলো জ্বালিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলে তৃপ্তিদায়ক ঘুম হতে পারে না। বেডরুমটি ঠাণ্ডা, অন্ধকার ও শব্দহীন হলে ঘুম তৃপ্তিদায়ক হয়। রাতের বেলা কিংবা ঘুমোনোর আগ দিয়ে কম্পিউটার ও স্মার্টফোনে ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। 

০৫) এদেশের উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের একটি সহজাত প্রবণতা হচ্ছে – তারা রক্তচাপ মাপার পর ১২০/৮০ বা কম পেলে কদিন পর আর ঔষধ খেতে চান না। একদিকে অর্থ বাঁচানোর তাগিদ এবং আরেকদিকে উচ্চরক্তচাপ ভাল হয়ে গেছে – এমন ভুল ধারণা থেকে তারা নিজে নিজেই ঔষধ সেবন করা বন্ধ করে দেন। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, উচ্চরক্তচাপ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটি ক্রনিক রোগ যা সারাজীবনই থাকবে এবং এটিকে সারাজীবন নিয়ন্ত্রণ করে চলতে হবে। সাধারণভাবে, রক্তচাপের সাময়িক অবনমন উচ্চরক্তচাপের ঔষধ সেবনের মাধ্যমেই ঘটে বলে এজন্য ঔষধ বন্ধ করা যাবে না। তবে যদি একান্তই বন্ধ করতে হয় তবে সেটি একজন চিকিৎসকের পরামর্শেই বন্ধ করতে হবে, নিজে নিজে বন্ধ করা যাবে না। যেমনঃ
 
০১) আচমকা Alpha agonist গ্রুপের ঔষধ যেমন Alpha-methyldopa, clonidine, and guanabenz – বন্ধ করে দিলে রাগ, ক্রোধ, মাথাব্যথা, ঘর্মাক্ত হওয়া, বমিভাবের পাশাপাশি রক্তচাপ বিপদজনক মাত্রায় বেড়ে যেতে পারে। 
০২) আচমকা Beta blocker e.g., propranolol, atenolol, bisoprolol, metoprolol গ্রুপের ঔষধ বন্ধ করে দিলে থাইরয়েড গ্রন্থির অতি সক্রিয়তা ও রক্তচলাচলের ঘাটতির কারণে সৃষ্ট হৃদরোগগুলোর তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে। 

প্রশ্নঃ রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে গেলে কী করবেন?

উত্তরঃ 

০১) হুড়োহুড়ি করবেন না > দাঁড়ানো থেকে দ্রুত নয় বরং ধীরগতিতে বসুন > শান্ত থাকুন > ৫ মিনিট পর রক্তচাপ মাপুন 
০২) যদি রক্তচাপ বেশি থাকে > তবে শুয়ে পড়ুন > প্রেশারের ঔষধ বাদ পড়েছে কিনা চিন্তা করুন > যদি বাদ পড়ে থাকে তবে তা দ্রুত সেবন করুন > অতঃপর বিশ্রাম নিন কিংবা ঘুমোনোর চেষ্টা করুন 
০৩) দিনে কয়েবার প্রেশার মেপে কাগজে লিপিবদ্ধ করুন 
০৪) কোন ভেষজ/অবৈধ ঔষধ/মাদক/স্টেরয়েড/নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ সেবন করলে তা অবশ্যই আপনার চিকিৎসককে জানাবেন 
০৫) স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল তথা মানসিক চাপ কমাতে – অল্প রাতে ঘুমোন > একটানা ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমোন 
০৬) সকাল সকাল কাজে যান ও পাবলিক ট্রান্সপোর্ট যতটা সম্ভব পরিহার করুন  
০৭) ছটফটানি, বুকে মাথায় কেমন লাগছে – মাথাব্যথা, চোখে ঝাপসা, বমিভাব, বমি, কনফিউশন, আবোল তাবোল বকা, ভুলে যাওয়া, ঝিমিয়ে পড়া, অচেতন বা অজ্ঞান, খিঁচুনি, মুখ বেঁকে যাওয়া, হাত পা অবশ হয়ে আসা, নাড়াতে না পারা, মুখের কথা আটকে যাওয়া, পিঠ বা পেটে ব্যথা, অস্থির লাগা, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া – এক সাইড দুর্বল > এগুলো হচ্ছে রক্ত চলাচলে অক্ষমতাজনিত স্ট্রোকের লক্ষণ > এই ক্ষেত্রে রক্তচাপ দ্রুত নামানো অত্যন্ত বিপদজনক > এতে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে  
০৮) পক্ষান্তরে, রক্তনালী ছিড়ে গেলে সেটি হচ্ছে রক্তপাতজনিত স্ট্রোক > এই ক্ষেত্রে রক্তচাপ দ্রুত নামাতে হতে পারে > এক্ষেত্রে রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের জন্য দেওয়া ঔষধ বাদে আর অন্য কোনো ঔষধ খাবেন না > এই রোগে শিরাপথে ঔষধ দেওয়া লাগে ফলে এর বাসায় বসে ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব নয় > এজন্য দ্রুত হাসপাতালের জরুরী বিভাগে যোগাযোগ করতে হবে। 
০৯) হার্ট অ্যাটাকে বুকে ব্যথা হয় ও রক্তচাপ বাড়ে > সেক্ষেত্রে  নাইট্রেট স্প্রে জিভের নিচে ৩ বার ১০ সেকেন্ড ব্যবধানে প্রয়োগ করা সঙ্গত > এতে উপকার না পেলে দ্রুত হাসপাতালের জরুরী বিভাগে যোগাযোগ করতে হবে।
 ১০) প্রাকৃতিক খাদ্য তীব্র নয় বরং লাগাতার সমস্যায় এবং তাৎক্ষণিক নয় বরং অত্যন্ত ধীরগতিতে রক্তচাপ নামায় বলে ১৬০/৯০ বা তদূর্ধ্ব মাত্রার উচ্চরক্তচাপ তাৎক্ষণিকভাবে কমানোর ক্ষেত্রে তেতুল গোলা পানি, ডাবের পানি সহ কোনো ধরনের প্রাকৃতিক খাদ্য বা ফল গ্রহণের কোনোরূপ ইতিবাচক ভূমিকা নেই তথা এগুলো গ্রহণ অনর্থক। 

প্রশ্নঃ উচ্চরক্তচাপের প্রাথমিক মূল্যায়নের জন্য কি কি ডায়াগনস্টিক টেস্ট করার প্রয়োজন পড়ে?

 উত্তরঃ

০১) Renal: Urine RME, Serum Albumin, Blood urea nitrogen, Serum creatinine
০২) Endocrine: Serum sodium & potassium included in Serum electrolyte, Serum calcium, Serum thyroid stimulating hormone
০৩) Metabolic: FBS, Lipid profile
০৪) Other: Hematocrit, ECG

প্রশ্নঃ কেন রক্তচাপ আচমকা বা দ্রুত বাড়ে?

 উত্তরঃ

০১) উচ্চরক্তচাপের চিকিৎসা না করাঃ বিশেষ কোন লক্ষণ দেখা যায় না বলে এবং রক্তচাপার মাপার পদ্ধতি না জানায় অনেক রোগী নিজের রোগ সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকেন, সেই সুযোগে রোগটি রোগীর মধ্যে বিস্তার লাভ করে।
০২) অপর্যাপ্ত চিকিৎসা করাঃ লক্ষণহীনতার কারণে কিংবা ভালো অনুভব করায় অনেক রোগী ঔষধ শুরু করে মাঝপথে বন্ধ করে দেন। ভুলে যাওয়া ও আর্থিক অসঙ্গতি থেকে অনিয়মিতভাবে গ্রহণ ও কম পরিমাণে গ্রহণ করা থেকে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়তে থাকে।  
০৩) সকল ঔষধেরই কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে – এটি মূলত চিকিৎসকের মাথাব্যথা, রোগীর মাথাব্যথা নয়। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে নিজে নিজে ঔষধ বন্ধ না করে বা মাত্রা না কমিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।
০৪) নিম্নোক্ত অসুখে রক্তচাপ আচমকা ও দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকেঃ থাইরয়েড ও ক্রনিক কিডনী ডিজিজ, গর্ভাবস্থার প্রি-এক্লাম্পশিয়া ও এক্লাম্পশিয়া, কোলাজেন ভাস্কুলার ডিজিজ, অ্যাডরেনাল অতিসক্রিয়তা, স্ক্লেরোডার্মা, ধূমপান, স্ট্রেস
০৫) ঔষধঃ স্টেরয়েড, ভেষজ, পেইনকিলার, ক্যাফেইন, কোকেইন

প্রশ্নঃ উচ্চরক্তচাপ থেকে কী কী জটিলতা বা রোগ সৃষ্টি হতে পারে বা ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে? 

উত্তরঃ 

✳ ক) হৃদপিণ্ডের রোগ
০১) হৃদযন্ত্রের কোষে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রসূত প্রাণঘাতী বুক ব্যথা (Heart Attack)
 ০২) হৃদযন্ত্রের মাংশপেশীর আকৃতিগত অতিবৃদ্ধি তথা কার্যকারিতার বৈকল্য বা দুর্বলতা (Hypertensive Cardiomyopathy or Heart Failure)
০৩) বাম নিলয়ের আকৃতিগত অতিবৃদ্ধি (Left ventricular hypertrophy) যা Stroke, CHF, and sudden death ঘটাতে পারে
০৪) হৃদযন্ত্রের প্রসারণ সংশ্লিষ্ট সমস্যা (diastolic dysfunction)
০৫) করোনারি ধমনীতে চর্বি জমে যাওয়া সংশ্লিষ্ট রোগ (atherosclerotic coronary artery disease and microvascular disease)
০৬) অনিয়মিত ও অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন (cardiac arrhythmias)

✳ খ) মস্তিষ্কের রোগঃ
০১) মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলের পথ সরু হয়ে আসা কিংবা রক্তনালী ফেটে যাওয়া জনিত পক্ষাঘাত (Ischemic or Hemorrhagic Stroke)
 ০২) মতিভ্রম, মাথাব্যথা ও খিঁচুনি (Hypertensive encephalopathy) 
০৩) স্মৃতিভ্রংশতা (Vascular Dementia)
✳ গ) রক্তনালিকার রোগঃ
০১) রক্তনালীতে রক্তের বুদবুদ সৃষ্টি হওয়া (Embolism)
০২) রক্তনালী বা ধমনী ফেটে যাওয়া (Aneurysm)
০৩) পার্শ্বীয় ধমনী সংশ্লিষ্ট রোগ (Peripheral Arterial Disease) 
০৪) মহাধমনীর ব্যবচ্ছেদ (Aortic Dissection)
০৫) রক্তশূন্যতা (Anemia) 

✳ ঘ) অন্যান্য রোগঃ 
০১) বৃক্কের কার্যকারিতার হ্রাস (Chronic Kidney Disease & End Stage Kidney Disease)
০২) চোখের রক্তনালী ফেটে যাওয়া জনিত চোখে ঝাপসা দেখা (Hypertensive Retinopathy) 
০৩) বিপাকীয় সমস্যাজনিত অসুখ (Metabolic Syndrome)
০৪) যৌন অক্ষমতা (Erectile Dysfunction)
০৫) ফুসফুসে পানি আসা (Pulmonary Edema) 

 প্রশ্নঃ চিকিৎসক কর্তৃক নির্দেশিত উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ গ্রহণের পরেও উচ্চরক্তচাপ কেন নিয়ন্ত্রণে আসছে না?

উত্তরঃ
০১) চিকিৎসকের নির্দেশিত চিকিৎসাপন্থা অনুসরণ না করে অনুমানের ভিত্তিতে অযথার্থ তথা ভুল ঔষধ নির্বাচন 
 ০২) এক/একাধিক বা কোনো ঔষধেই কাজ হয় না এমন প্রকৃতির ঔষধ-প্রতিরোধী উচ্চরক্তচাপ
০৩) উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি শরীরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, প্রস্টেট গ্ল্যান্ড সমস্যা, অ্যাজমা ইত্যাদি অসুখের সহাবস্থান ও একটি ঔষধের সাথে আরেকটি ঔষধের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া জনিত কারণ
 ০৪) সবার শরীরে সব ধরনের ঔষধ সহ্য হয় না জনিত কারণ
 ০৫) বিদেশী ও বাংলাদেশী/ভারতীয়দের জেনেটিক গঠনের ভিন্নতার কারণে বিদেশে ভালো কাজ করা ঔষধ বাংলাদেশ/ভারতে কাজ করে না – সংক্রান্ত কারণ 
ঔষধ নির্বাচন ও ঔষধের মাত্রা নির্ধারণ একটি শিল্প যা বাংলাদেশের অনেক চিকিৎসকেরই নেই। এর পেছনে কারণ –
 ০১) টেক্সটবুক বা মূল বই না পড়ে গাইড পড়ার মাধ্যমে মেডিকেল পাস করা যার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ বা সম্যক জ্ঞান অর্জিত না হওয়া
 ০২) ইংরেজিতে ব্যাপক দুর্বলতার কারণে এবং মূল টেক্সটবুকের কার্যকরী অনুবাদগ্রন্থ না থাকার কারণে রোগ ও অসুখের কার্যপ্রণালী (Mechanism of action) বা বিকাশের ধারা (Pathophysiology) সম্পর্কে ব্যাপক অজ্ঞতার কারণে ভুল বা অযথার্থ ঔষধ নির্বাচন ও সঠিক মাত্রা নিরূপণের অক্ষমতা
 ০৩) অল্প সময়ে রোগী দেখা তথা রোগীর বিভিন্ন অঙ্গ/তন্ত্র পরীক্ষানিরীক্ষা (Physical examination of organs or different tracts) না করেই রোগীকে অনুমানভিত্তিক বা মোটামুটি একটি ব্যবস্থাপনা দেওয়া

ভুল বা অযথার্থ ঔষধ সেবন করে বা সঠিক মাত্রা নিরূপণে অক্ষমতা ব্যবস্থাপনার অভাবে মানুষের যে অর্থের অপচয় হচ্ছে, শুধু তাই নয় বরং বিভিন্ন রোগ শরীরে বাসা বাঁধছে। এসবের মাধ্যমে রোগীরা পায়ে পানি আসা, খুশখুশে কাশি, ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা, হৃদস্পন্দনের গতি অস্বাভাবিক হারে কমে/বেড়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, প্রস্রাব কম/অতিরিক্ত হওয়া, রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে নেমে যাওয়া, মাটিতে পড়ে যাওয়া, মূর্ছা যাওয়া, তীব্র শারিরিক দুর্বলতা সহ বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার শিকার হচ্ছেন।

☯ উপসংহারঃ 

আর্থিক অসঙ্গতি ও সবজান্তা শমসেরগিরি থেকে এদেশের মানুষের নিজে নিজে উচ্চরক্তচাপের চিকিৎসা করার প্রচেষ্টা দেখা যায় বলে এই আর্টিকেলে ঔষধ সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য দেওয়া হল না। এক এক ঔষধ এক এক ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেই ঔষধ এক রোগীর জন্য প্রযোজ্য সেই ঔষধ অন্য রোগীর জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে। আবার, উচ্চরক্তচাপের পাশাপাশি রোগীর অন্যান্য রোগ থাকলে সে সব রোগের কারণে বেশ কিছু উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধী ঔষধ প্রতিনির্দেশিত। ফলে খুবই সাবধান, ডাক্তার না হয়ে কখনো নিজে নিজে উচ্চরক্তচাপ সহ কোনো রোগেরই চিকিৎসা করতে যাবেন না। এতে প্রাণঘাতী জটিলতা পর্যন্ত সৃষ্টি হতে পারে।

মুশফিক ইমতিয়াজ চৌধুরী,
ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Top Post Ad

Below Post Ad

advertise