Ads Area

advertise

শূন্য শক্তির মহাবিশ্ব

0
লেখকঃ এ আর মুবিন

 
ভরের সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই, ভর শুধু এক রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তিত হতে পারে,–এটি হচ্ছে ভরের নিত্যতার সূত্র। মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুরুতে যদি ভর সৃষ্টি হওয়া লাগে, তাহলে এটা হবে ভরের নিত্যতার সূত্রের লঙ্ঘন। তার মানে কি ভরের নিত্যতার সূত্র লঙ্ঘিত হয়ে তবেই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিল? নাহ, জিরো এনার্জি হাইপোথিসিস অনুযায়ী, মহাবিশ্ব এসেছে শূন্য থেকে, হ্যাঁ ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত ঠেকে আমাদের কাছে, তাই অনেকেই বুঝতে পারেন না, তাই দেখি আজ কতটুকু বোঝাতে পারি...

• ভর, মোমেন্টাম ও শক্তি, এই তিনে মিলে হয় পদার্থ। পদার্থের একটি সহজ সংজ্ঞা হলো–যার সাথে জোর করলে সেও পাল্টা জোর করে। একটি বস্তুর মধ্যকার পদার্থের পরিমাণ জানা যায় সেটির ভর মাপলে। বস্তুর ভর যত বেশি হবে, তার সাথে জোর করলে সে তত বেশি পাল্টা জোর দেবে। 

• বস্তু গতিশীল হলে এই গতিশীলতাকে বলা হয় বস্তুর মোমেন্টাম, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মোমেন্টাম হচ্ছে বস্তুর মধ্যকার ভর এবং বস্তুর গতির গুণফলের সমান। ভেক্টর রাশি হওয়ার সুবাদে মোমেন্টামের দিক এবং বস্তুর চলার দিক একই।

• ভর এবং মোমেন্টাম থেকে পদার্থের আরেকটি ধর্ম বেরিয়ে আসে, সেটা হচ্ছে জড়তা। একটা স্থির বস্তু যত ভারী তাকে নড়াতে হলে তত বেশি শক্তি লাগবে, শক্তির সাহায্যে ভারী বস্তুটা যত বেশি নড়তে থাকবে, তখন তাকে থামাতে গেলেও ততই বেশি শক্তি লাগবে।

• বস্তুর মোমেন্টাম থেকে আরেকটি ধর্ম চলে আসে, সেটা হচ্ছে শক্তি। যখন বস্তুর মোমেন্টাম শূন্য থাকে, তখন বস্তুর শক্তি তার ভরের সমানুপাতিক (E=m), এটাকে বলে পদার্থের স্থিতিশক্তি। পদার্থ যখন গতিশীল হয়, তখন এর শক্তি স্থিতিশক্তির চেয়ে বেড়ে যায়, এই বাড়তি শক্তিকে বলে গতিশক্তি। তো, ভর, মোমেন্টাম, ও শক্তি, এই তিনটি বৈশিষ্ট্যের যে-কোনো দুটি জানা থাকলেই গাণিতিক হিসেব করে অপরটি বের করা যায়।

আইনস্টাইনের বিখ্যাত স্পেশাল রিলেটিভিটির সূত্রটি হচ্ছে E=mc2 যেখানে m হচ্ছে বস্তুর ভর, যাকে আলোর বেগ c এর বর্গ দিয়ে গুণ করলে E অর্থাৎ শক্তি পাওয়া যায়। আলোর বেগ হচ্ছে সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটার, এবার বুঝেন তাইলে ৩ লক্ষ এর বর্গকে m এর সাথে গুণ করলে ভর কী বিশাল পরিমাণ E (শক্তি) তে রূপান্তরিত হবে! পরমাণু বোমা তো আর এমনি এমনিই এত শক্তিশালী না!

এ থেকে আরেকটা ব্যাপার বোঝা গেল–
ভরকে শক্তিতে রূপান্তর করা যায়, আবার শক্তি থেকেও ভরের উৎপত্তি ঘটে। অর্থাৎ, যাহাই ভর তাহাই শক্তি! তাহলে আমরা মীমাংসা পেলাম–
মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় ভরকে “সৃষ্টি” হতে হয়নি, শক্তি থেকে রূপান্তর ঘটে ভর হয়েছে মাত্র!

এবার পরবর্তী সমস্যা, ভরের নিত্যতার সূত্রের মতো শক্তিরও নিত্যতার সূত্র আছে, শক্তির নিত্যতা সূত্র অনুযায়ী–“শক্তির সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই, শক্তি শুধু রূপ পাল্টাতে পারে, মহাবিশ্বে মোট শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট এবং অপরিবর্তনীয়”।

তাহলে মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুরুতে শক্তি এলো কোত্থেকে? শক্তি যদি তখন তৈরি হয় তাহলে তো সে সময়ই শক্তির নিত্যতার সূত্রের লঙ্ঘন ঘটেছিল! কিন্তু না, এখানেই মূল খেলাটা! আসলে মহাবিশ্বে মোট শক্তির পরিমাণ শূন্য! কারণ, হিসেব করে দেখা গেছে, একটি মোটামুটি সমসত্ত্ব মহাবিশ্বে সমস্ত ধণাত্মক মহাকর্ষীয় শক্তি (পদার্থ) এবং সমস্ত ঋণাত্মক মহাকর্ষীয় শক্তি (মহাকর্ষ) একে অপরকে কাটাকাটি করে নিষ্ক্রিয় করে দেয়! একটা মহাবিশ্ব শূন্য থেকে শুরু হলে শক্তির মান যতটুকু পাওয়া যাওয়ার কথা, হিসেব করে দেখা গেছে শক্তির মান ততটুকুই আছে, অর্থাৎ শূন্য। এ থেকেই স্পষ্টভাবে বোঝা যায় মহাবিশ্ব স্বতঃস্ফূর্তভাবেই শূন্য থেকে এসেছে।

এ আর মুবিন,
ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Top Post Ad

Below Post Ad

advertise