লেখকঃ ইমদাদুল হক আফনান
আপনার সামনেই একজন গরম তেল থেকে খালি হাতে খাবার তুলে এনে দিলো আপনার পাতে?! হকচকিয়ে উঠলেন? কিভাবে করলো এই জাদুকরী জিনিস?! ১) বিভিন্ন তেলের স্মোকিং পয়েন্ট ভিন্ন ভিন্ন। অলীভ অয়েলের স্মোকিং পয়েন্ট প্রায় 160°-190° C , অপরদিকে মাস্টার্ড অয়েলের স্মোকিং পয়েন্ট 250°C !
কম স্মোকিং পয়েন্টের তেলে কয়েক মুহূর্তের জন্য হাত দিলে কিন্তু আপনার হাতের কিছুই হবে না। ফোসকাও পড়বে না, ত্বকের ক্ষতিও হবে না। যে আপনাকে অসাধারণ জিনিসটা দেখাচ্ছে সেও কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের বেশি হাত দিয়ে রাখতে পারবে না। সাধারণ একটা জিনিস দিয়েই সবাইকে অবাক করে দিচ্ছে সে।
২) ভালোভাবে বিষয়গুলা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় সেই তেল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যথেষ্ট গরম থাকে না।
৩) অনেকে গরম তেলে হাত দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতেও পারে। বিভিন্ন নির্দিষ্ট কেসে ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি হলো তেলের জায়গায় অন্য কোনো তরল ব্যবহার করা যার বয়েলিং পয়েন্ট তেলের থেকে কম এবং তেলের মতোই ঘনত্ববিশিষ্ট। এক্ষেত্রে সব থেকে বেশি ব্যবহার করা হয় লেবুর রস। পাত্রে তেল ঢেলেই তার উপরের অংশে লেবুর রস ঢেলে দেওয়া হয়। নিচের তেল যথেষ্ট গরম হওয়ার আগেই উপরে থাকা লেবুর রস ফুটতে শুরু করবে। আর রাধুনী তাতে হাত চুবিয়ে এনে বলবে সে মারাত্মক গরম তেলে হাত দিয়েছে। যারা লেবুর রস মেশাতে দেখে নি তাদের কাছে বিষয়টা জাদুকরীই বটে! কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তেল ততক্ষণে তার স্মোকিং পয়েন্টেও পৌছায় নি!
৪) Leidenfrost effect ব্যবহার করেও গরম তেলে হাত দেওয়ার কান্ড ঘটানো যায় সহজেই। কোনো গরম তলের তাপমাত্রা থেকে কম বয়েলিং পয়েন্টের তরলকে সেই তলে রাখা হলে তা বয়েলিং পয়েন্টে যেতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সময় নিবে। তার থেকে কম তাপমাত্রার তলে রাখলেও সে তরল আরো দ্রুত বয়েলিং পয়েন্টে পৌছে যেত। লেইডেনফ্রোস্ট ইফেক্টের কারণে পানি বা অন্য কোনো কম বয়েলিং পয়েন্টের তরলে হাত ভিজিয়ে তা দিয়ে গরম তেলে হাত দিলে প্রয়োজনের বেশি সময় লাগবে হাত গরম হতে বা ত্বকের ক্ষতি হতে। কোনো ক্ষতি হওয়ার আগে সহজেই হাত তুলে আনা যায়!
এটার ব্যাখ্যা নিয়ে ইউটিউবে Physics girl এর ভালো একটা ভিডিয়ো আছে। ভিডিয়োর লিংকঃ https://youtu.be/eZ0Mg-sOvoQ
৫) আরেকটা পদ্ধতি আছে যেটা সাধারণত পুরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে দেখা যায়। একটা পুরিকে তেলে দেওয়ার সময় সেটাকে হাতের প্রটেকশন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সে পুরি যতক্ষণে তাপ গ্রহণ করে গরম হয় ততক্ষণে রাধুনী ভাজা আরেকটা পুরি তুলে আনে। এতে তার হাতে ফোসকাও পড়বে না আর ত্বকের কোনো ক্ষতিও হবে না।
৬) অনেকে তেলে হাত দেওয়ার আগে কিছুটা প্রটেকশন ইউজ করে । যেমন হাতে আটা বা অন্য কিছুর কাই লাগিয়ে নেওয়া অথবা ঠান্ডা কিছু ছুয়ে নেওয়া ইত্যাদি। গরম তেলে হাত দিলে এগুলো প্রটেকশন হিসেবে কাজ করে।
এছাড়া এসকল রেস্টুরেন্টে বা রেস্তোরাঁয় যে তেল ব্যবহার করা হয় তার বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়!
৭) তাছাড়া পরিচলন পদ্ধতির কথা তো জানেনই। তরলকে পাত্রে নিয়ে তাপ দিলে নিচের অংশে বেশি গরম হবে, উপরের অংশ তার তুলনায় একটু কম গরম থাকবে। তাতে কয়েকবার হাত দিয়ে প্রাকটিস করলেই কেল্লাফতে!
তথ্যসূত্রঃ
https://www.quora.com/How-can-some-street-food-vendors-dip-their-hands-in-boiling-oil-without-getting-burned/answer/Teri-Draper?ch=10&share=2608c8e6&srid=vh6U0
ও_https://skeptics.stackexchange.com/questions/34847/can-a-person-submerge-their-hands-in-hot-frying-oil-without-adverse-effects