Ads Area

advertise

মিউটেশান জিনিসটা কী আসলেই "র‍্যান্ডম"?

0
হাসান উজ-জামান শ্যামল


১।

পেপার-পত্রিকার ভাষায়, আমাদের দেহের জীবন রহস্য বা নীলনকশা বলে যদি কিছু থাকে- তার নাম হল ডিএনএ। দেহের গঠন কীরকম হবে, কোষগুলোর মধ্যে যন্ত্রপাতি কীভাবে তৈরি হবে, কতখানি করে তৈরি হবে, কোনো কারণে ভেঙে গেলে মেরামত কী করে করতে হবে, ইত্যাদি হাজার রকম তথ্য এই ডিএনএর মধ্যে চারটা অক্ষর দিয়ে "লেখা" থাকে। জীবন রহস্য বা নীলনকশার উপমা আমরা এজন্যই দেই।

এটুকু হয়ত আপনারা জানেন। হয়ত এটাও জানেন যে, আমাদের ডিএনএর মধ্যে নানা কারণে পরিবর্তন হয়। পরিবর্তন কথাটার একটু রাশভারী অনুবাদ হল মিউটেশান। সেজন্যই ক্যাথলিক ধর্মতত্ত্বে ঈশ্বরকে বলা হয় ইমিউটেবল, মানে অপরিবর্তনীয়। ঈশ্বরের মিউটেশান হয় না, তিনি যেমন তেমনই।

তো অনেকের মধ্যে এই ডিএনএর মিউটেশান সম্পর্কে একটা কথা খুব প্রচলিত দেখি, সেটা হল মিউটেশান একদমই "র‍্যান্ডম"। প্রচলিত কথাবার্তায় "র‍্যান্ডম" কথাটার অর্থ এলোমেলো বা দৈব- যে ঘটনার পেছনে কোন বাহ্যিক কার্যকারণ নেই। ব্যাপারটা যদি সেরকমই হয়, তার মানে দাঁড়ায় এরকম- ডিএনএতে কখন যে কোন মিউটেশান হবে, সেটা আগে থেকে বলা অসম্ভব। সবই যেহেতু র‍্যান্ডম ছক্কার দান।

বেশি ধানাইপানাই না করে এই ব্যাপারে আমার বক্তব্য প্রথমেই বলে দেই। প্রকৃতপক্ষে মিউটেশান বা ডিএনএর পরিবর্তন জিনিসটা আসলে আদৌ র‍্যান্ডম বা দৈব নয়- অন্তত প্রচলিত অর্থে তো নয়ই। মিউটেশান কেন হয় সেটা আমরা ভালমতই জানি, এবং ডিএনএর কোথায় কখন কীভাবে কোন মিউটেশান হবে তার অনেকটাই আমরা আগে থেকে বের করতে পারি- অন্তত সম্ভাব্যতা হলেও। জীববিজ্ঞানীরা যখন মিউটেশানকে র‍্যান্ডম বলেন, তখন তারা কথাটার খুব বিশেষ একটা অর্থ ব্যবহার করেন, যার সাথে এর প্রচলিত অর্থের কোন মিল নেই। আবার সেই বিশেষ, সংকীর্ণ অর্থেও যদি আপনি মিউটেশানকে র‍্যান্ডম বলতে চান, সেক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম এবং যদিকিন্তুর সাক্ষাৎ পাবেন।

আমার এই লেখার উদ্দেশ্য এই বিতর্কের মীমাংসা করা নয়, এটা নিয়ে সামনে হয়ত আরেকটু বড় পরিসরে লিখব। আপাতত একটা ছোট্ট উদাহরণের গল্প করি, যেখানে বিজ্ঞানীরা ঠিকই বের করে ফেলেছেন কোথায় কীভাবে কোন জাতের মিউটেশান হয়।

মানে তথাকথিত "র‍্যান্ডম" বা এলোমেলো অনিয়ন্ত্রিত দৈব একটা জিনিসের কলকাঠি আমরা খুঁজে পেয়েছি।


২।

আমার স্ত্রী ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, এখন অবশ্য পিএইচডি করতে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। দেশ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য আসার আগে তাঁর ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে সুন্দর একটা বই উপহার দিয়েছিলেন- The Immortal Life of Henrietta Lacks।

বিজ্ঞান জগতের নাটকীয়তা নিয়ে অনেকগুলো বিষাদসিন্ধু লেখা সম্ভব। আজ থেকে প্রায় সত্তর বছর আগে এই হেনরিয়েটা ল্যাকস ভদ্রমহিলা ক্যান্সার নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। ক্যান্সারে ভুগে ঐ বছরই তিনি মৃত্যুবরণ করেন, কিন্তু তার এই দুর্ভাগ্যটাই বিজ্ঞানীদের বিশাল একটা সুবিধা করে দিল।

ধরুন আপনি একটা নতুন ওষুধ বের করলেন- চলতি মৌসুমের সাথে মিল রেখে ধরি এটা কোভিড ঊনিশের ওষুধ। ওষুধ বের করলেই সেটা সাথে সাথে বাজারে চলে আসতে পারে না। তার কারণ মানুষের দেহে কোন জিনিসটা যে কী প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, তা শুধুমাত্র ওষুধের উপকরণ তালিকা দেখে আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। এজন্যই প্রত্যেকটা ওষুধকে প্রথমে একটা দীর্ঘ ঝাড়াইবাছাই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, যেখানে মানুষ আর অন্যান্য কিছু প্রাণীকে সীমিত উপায়ে গিনিপিগ বানিয়ে ওষুধটার হালচাল পরীক্ষা করা হয়। করোনাভাইরাসের টিকা তো তাও তাড়াতাড়িই এসেছে, এমনিতে এরকম টিকা আসতে এত এত সময় লাগার কারণ হল কারো দেহে এটা কীরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করছে সেটা বাজিয়ে দেখা।

তো এভাবে ওষুধপত্রের "ট্রায়াল" দেওয়ার প্রথম ধাপ হচ্ছে মানুষের কোষের নমুনার ওপর পরীক্ষা করা। আমাদের দেহ যে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষ দিয়ে গঠিত তা হয়ত জানেন। কাজেই ওষুধ পরীক্ষার খুবই সুবিধাজনক এবং গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হচ্ছে একরাশ কোষ নিয়ে তাদের মধ্যে ওষুধটা দিয়ে দেখা কীভাবে কী হচ্ছে।

এমনিতে এটা কিন্তু বিশাল হ্যাপা হতে পারত। প্রত্যেকবার একটা পরীক্ষা করার জন্য যদি নতুন একগাদা কোষ বের করা লাগে, তাহলে কোষের একটা অনবরত সরবরাহ লাগবে। আবার পরীক্ষার ফলাফলে যাতে ঊনিশ বিশ না হয়, সেটা নিশ্চিত করার জন্য সব গবেষণাগারের কোষগুলো একইরকম হওয়া চাই। এরকম একটা ব্যবস্থা করার উপায় কী? মানুষের কসাইখানা বানানো?

তার চেয়ে অনেক সহজ উপায় করে দিয়েছে ক্যান্সার। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর টিউমারের মধ্যে যে কোষগুলো থাকে, খাবারদাবার পেতে থাকলে তারা একদম অনবরত বংশবিস্তার করতে পারে। এজন্য এক চিলতে ক্যান্সার কোষ যদি কোনভাবে গবেষণাগারের পরিবেশে জিইয়ে রাখা যায়, তাহলেই আমরা মোটামুটি চিরস্থায়ীভাবে একটা কোষের উৎস পেয়ে গেলাম। এরা গবেষণাগারে বেঁচেবর্তে থাকবে, আরামসে বংশবিস্তার করবে, আর সেখান থেকে প্রয়োজনে আমরা অল্প করে নিয়ে আমাদের ওষুধপত্র ট্রায়াল দিয়ে দেখব।

পঞ্চাশের দশকে যে হেনরিয়েটা ল্যাকস ভদ্রমহিলার কথা বলছিলাম, কোন কারণে তার টিউমারের কোষগুলো এভাবে গবেষণাগারে জিইয়ে রাখা সম্ভব হয়েছিল। তিনি একসময় মৃত্যুবরণ করলেন, কিন্তু তার সেই কোষগুলো গবেষণাগারে বেঁচে রইল। গবেষকেরা সেই কোষগুলো তাদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কাজে লাগাতে শুরু করলেন, ওষুধপত্র ট্রায়াল তার একটা উদাহরণ মাত্র। আজ থেকে সত্তর বছর পরেও তার কোষগুলো পৃথিবীর হাজার গবেষণাগারে বহাল তবিয়তে ব্যবহৃত হচ্ছে। এজন্যই The Immortal Life of Henrietta Lacks.

একদিক থেকে দেখলে ব্যাপারটা খুবই হৃদয়বিদারক, কিন্তু জগতের বাস্তবতাই এই। হেনরিয়েটা ল্যাকসের করুণ মৃত্যু বাকি মানবজাতির জন্য বিশাল একটা সুসংবাদ হয়ে এল। খালি উনি একা নন, ক্যান্সারের টিউমার থেকে পাওয়া অন্যান্য কোষের নমুনাও জীববিজ্ঞান গবেষণার হাজারটা কাজে লাগে। ভাল গবেষণা হতে গেলে (বা অন্যভাবে মানবজাতির উপকারে আসতে হলে) বোধহয় কাউকে না কাউকে খুব কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

আমরা কথা বলছিলাম ডিএনএর মিউটেশান নিয়ে। এই জিনিসটা বোঝার জন্য ক্যান্সার কোষের বিকল্প নেই।

ডিএনএ আমাদের জীবনের নীলনকশা, এখানে "লেখা" তথ্য অনুসারেই মোটামুটি আমাদের দেহ সাজানো। তার মানে এই জিনিসটা যত্ন করে রাখা অতি জরুরি। দেহে আর হাজারটা ক্ষতি হয় হোক, নীলনকশার মধ্যে যদি কোনক্রমে ফাটল ধরে- তাহলে তো কোষ বুঝবেই না তাকে কী কাজ করতে হবে। এজন্যই আমাদের কোষের একটা বিরাট অংশের কাজ হল ডিএনএ জিনিসটার সার্বক্ষণিক তদারকি করা, এবং কোনরকম ক্ষতি হলে সাথে সাথে মেরামত করা। অন্যভাবে বলতে গেলে, এই ডিএনএ মেরামতি সিস্টেমের উদ্দেশ্য হচ্ছে ডিএনএর মধ্যে পরিবর্তন- আমাদের সেই মিউটেশান- যতদূর সম্ভব কম রাখা। ডিএনএর ভাষার মধ্যে খুব ঘন ঘন পরিবর্তন হলে আমাদের টেকা মুশকিল হত।

ক্যান্সার কোষের একটা বৈশিষ্ট্য হল, অনেকক্ষেত্রে এদের মধ্যে সেই ডিএনএ মেরামতি ব্যবস্থাগুলো আর ঠিকভাবে কাজ করে না। ফলে ডিএনএর মধ্যে ক্রমাগত পরিবর্তন আসতে থাকে। ক্যান্সার রোগীর সর্বনাশ হওয়ার এটা একটা মূল কারণ। কাজেই আমাদের দেহের ডিএনএর মধ্যে যদি মিউটেশানের গতিপ্রকৃতি কার্যকারণ বুঝতে চান, তাহলে ক্যান্সার কোষ এদিক থেকে খুব সুবিধে।

তো একদিন প্রোস্টেট ক্যান্সারের রোগীদের মধ্যে বিজ্ঞানীরা একটা আশ্চর্য জিনিস খেয়াল করলেন। কোন কারণে এই হতভাগ্য মানুষগুলোর টিউমারের মধ্যে ডিএনএর দু'টো অংশ একসাথে জোড়া লেগে গেছে।


৩।

এমনিতে কিন্তু আমাদের ডিএনএর মধ্যে এই অংশদু'টোর অবস্থান বেশ দূরে। ডিএনএর অক্ষর গুণে যদি হিসেব করি, তাহলে দু'টো অংশের দূরত্ব প্রায় ত্রিশ লাখ অক্ষর। মানে পুরো ক্রোমোজোমের দৈর্ঘ্যের ষোল ভাগের এক ভাগ। অথচ এতখানি দূরের দু'টুকরো ডিএনএ কোন কারণে জোড়া হয়ে বসে আছে। খালি এক-দু'জন নয়, ক্যান্সারঅলাদের অর্ধেকের মধ্যেই এই কাহিনী। একটা বইয়ের পেছন থেকে একটা পাতা ছিঁড়ে যদি সামনের দিকে নিয়ে আসেন- তাহলে বইটার অবস্থা কীরকম হবে ভেবেছেন? যদি রহস্য রোমাঞ্চের বই হয়, তাহলে হয়ত শেষের কাহিনী প্রথম দিকেই জেনে ফেলবেন। এটা একটা বিশাল মাপের পরিবর্তন। পরিবর্তন মানেই মিউটেশান। এই অদ্ভুত মিউটেশানটা বার বার প্রোস্টেট ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে।

বজ্রপাত এক গাছে দু'বার পড়ে না, প্রবাদ হয়ত শুনেছেন। কিন্তু যদি দেখেন কোন একটা বিশেষ প্রজাতির অর্ধেক গাছই বজ্রপাতে পুড়ে গেছে?

একটা জিনিস যদি একই প্রেক্ষিতে বারবার দেখা যায়, তার মানে এর পেছনে কোন কারণ আছে। এলোমেলো বা দৈব ঘটনা একই জায়গায় বারবার হয় না। বিজ্ঞানীরাও খুঁজেপেতে এত দূরের দু'টুকরো ডিএনএ জোড়া লাগার একটা সম্ভাব্য কারণ দাঁড় করালেন।

এই ঘটনা দেখা যাচ্ছে শুধু প্রোস্টেট টিউমারের মধ্যেই। প্রোস্টেট অঙ্গটায় একটা বিশেষ হরমোনের প্রভাব অনেক। এমন কী হতে পারে সেই হরমোনটাই এই জোড়া লাগার জন্য দায়ী?

আমরা অনেক সময় ডিএনএ জিনিসটাকে কল্পনা করি বাটিভর্তি নুডলসের মত- ল্যাদল্যাদে সুতোজাতীয় একরাশ জিনিস যেন কোষের একটা জায়গায় ইতস্তত ছড়িয়ে আছে। আসল বাস্তবতা ভিন্ন। ডিএনএ জিনিসটা কোষের মধ্যে অনেক নড়াচড়া করে, সুড়সুড় করে এদিক-ওদিক যায়। ডিএনএর চলাচলের জন্যই কোষের মধ্যে আলাদা একরাশ যন্ত্রপাতি আছে। এই জগতটা যেন আলাদা এক মহাবিশ্ব- একগাদা ডিএনএ সাপের মত সরসর করে এদিকে ওদিকে যাচ্ছে, তার জায়গা করার জন্য ডিএনএর অন্য আরেক অংশ ফেঁপে উঠছে, আরেক অংশ সংকুচিত হচ্ছে, গিঁট যাতে না লাগে তার ব্যবস্থা হচ্ছে- বিশাল অবস্থা। বিশেষ করে দু'টুকরো ডিএনএর কাজ যদি কোনভাবে সম্পর্কিত হয়, তাহলে তারা এমনিতে যতই দূরে থাকুক, কাজের সময় তারা  কাছাকাছি চলে আসে। কোষ নিজ দায়িত্বে সেই ব্যবস্থা করে।

এই গতিশীল ডিএনএ, আর প্রোস্টেটে হরমোনটার প্রভাব- এই দুই ব্যাপার এক করে বিজ্ঞানীরা তাদের ব্যাখ্যা দাঁড় করালেন। ঐ দু'টুকরো সন্দেহভাজন ডিএনএ কিন্তু সেই হরমোনটার কাজের সাথে সম্পর্কিত। এমনিতে এদের দূরত্ব যতই হোক, হরমোনটার প্রভাবে হয়ত এদেরকে খুব কাছে আসতে হয়। এটুকু সাধারণ কোষগুলোর মধ্যেও হয়, কিন্তু ক্যান্সার কোষ খুব বেকায়দা বলে হয়ত এরা পটাৎ করে জোড়া লেগে যায়।

এতক্ষণ পর্যন্ত এসবই হচ্ছে ধারণা। ধারণা আর গালগল্প একই ব্যাপার। এর প্রমাণ কোথায়?


৪।

কোষের মধ্যে একদম সাগরতলের অন্ধকার- কিছুই আলাদা করে দেখার উপায় নেই। তার মধ্যে এক দু'চিলতে ডিএনএ কোথায় কী করছে সেটা দেখে বোঝার প্রশ্নই আসে না। এসব সূক্ষ্ম জিনিস দেখার একটা বেশ মনোরম পদ্ধতি বিজ্ঞানীরা বের করেছেন।

অন্ধকারে জ্বলে এমন একজাতের ঘড়ি আছে নিশ্চয়ই দেখেছেন, হয়ত আপনার নিজেরও আছে। কাঁটার গায়ে রেডিয়াম বা অন্য কিছু দেওয়া, ফলে কারেন্ট-টারেন্ট চলে গেলেও ক'টা বাজে দেখতে অসুবিধে হয় না। সেরকম এমন এক তেলেসমাতি উপায় আছে, যার মাধ্যমে কোষের ভেতরে বিশেষ বিশেষ জায়গায় কিছু ঊজ্জ্বল অণু বসিয়ে দেওয়া যায়। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে তাকালে তখন সেটাকে ঘড়ির কাঁটার মত জ্বলতে দেখা যায়।

বিজ্ঞানীরা তাদের মিউটেশান গবেষণার জন্য ঐ দু'টুকরো ডিএনএর গায়ে কায়দা করে আলো বসিয়ে দিলেন। পুরো ব্যাপারটা হল প্রোস্টেট ক্যান্সারঅলা কোষের ভেতরে। নিচে বামদিকের ছবিটা দেখুন- সুন্দর দু'টো লাল সবুজ আলো দেখতে পাচ্ছেন? এরাই হচ্ছে সেই সন্দেহভাজন ডিএনএর টুকরো। এমনিতে কিন্তু এরা বেশ তফাতে থাকে।

দেখা গেল, যখন কোষগুলোকে সেই বিশেষ হরমোনটা দিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তখনই লাল সবুজ আলো একদম কাছাকাছি চলে আসছে। প্রায় গায়ে গায়ে মিশে যাওয়ার মত অবস্থা (ডানের ছবি)। তারা যে বিশেষ অবস্থায় একদম জোড়া লেগে যায়, ডিএনএর মধ্যে আরেকটু ভাংচুর করে বিজ্ঞানীরা সে প্রমাণটাও পেয়ে গেলেন।


৫।

তার মানে পুরো ঘটনাটা কী দাঁড়াল?

একটা বিশেষ জাতের মিউটেশান আছে, যার ফলে দু'টুকরো ডিএনএ কেন যেন জোড়া লেগে যায়। এই ঘটনা বেশি দেখা যায় প্রোস্টেট ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে। তার কারণ, এই অঙ্গটার মধ্যে একটা বিশেষ হরমোনের প্রভাব অনেক, আর সেই হরমোনটাই ডিএনএর অংশগুলোকে কাছাকাছি টেনে নিয়ে আসে। ক্যান্সার কোষের ডিএনএতে যেহেতু মেরামতির সেরকম ব্যবস্থা নেই, কাজেই ডিএনএ ভাংচুর হয় অনেক। ফলে কাছাকাছি ডিএনএ মড়াৎ করে ভেঙে গিয়ে একটা আরেকটার সাথে জোড়া লেগে যেতে পারে।

এটা কেবল একটা উদাহরণ, কিন্তু এরকম আরো অসংখ্য উদাহরণ আছে যেখানে বিজ্ঞানীরা মিউটেশানের কার্যকারণ একদম নির্দিষ্ট করে বলে দিতে পারেন। এই বাস্তবতা যে শুধু ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তাও নয়। প্রকৃতিতেও এরকম নজির অনেক যেখানে দেখা যায় দু'টুকরো ডিএনএ জোড়া লেগে বসে আছে। অনেক ক্ষেত্রে এদের কাজ হয় একই বা কাছাকাছি, অর্থাৎ হরমোন বা অন্য কিছুর প্রভাবে এরা কাছাকাছি এসেছিল বলেই পরে এভাবে জোট বেঁধেছে।

মিউটেশান র‍্যান্ডম না রে ভাই। প্রকৃতির আর দশটা ঘটনার মত এরও কার্যকারণ ব্যাখ্যা বিবরণ আছে।


তথ্যসূত্রঃ

Mani, R.S., Tomlins, S.A., Callahan, K., Ghosh, A., Nyati, M.K., Varambally, S., Palanisamy, N. and Chinnaiyan, A.M., 2009. Induced chromosomal proximity and gene fusions in prostate cancer. Science, 326(5957), pp.1230-1230.

ক্যান্সারের বাইরের এরকম একটা উদাহরণ-

Yanai, I., Derti, A. and DeLisi, C., 2001. Genes linked by fusion events are generally of the same functional category: a systematic analysis of 30 microbial genomes. Proceedings of the National Academy of Sciences, 98(14), pp.7940-7945.


হাসান উজ-জামান শ্যামল 


ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Top Post Ad

Below Post Ad

advertise