অনিন্দিতা ঘোস
ব্রাউজার কুকি কী জিনিস? এই কুকি কি খাওয়া যায়? নাকি গুঁড়ো করে মাথায় দেয়?
নামটা কুকি হলেও এই কুকি আমাদের খাওয়ার কুকি বা বিস্কুট নয়। প্রকৃতপক্ষে ব্রাউজার কুকি (cookie) হচ্ছে একগুচ্ছ ছোট্ট ডেটা। আপনি যখন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ব্রাউজিং করে বেড়ান, তখন আপনার ওয়েব ব্রাউজার আপনার ডিভাইসে কিছু ডেটা সংরক্ষণ করে রাখে। এটাই ব্রাউজার কুকি। এর প্রকৃত নাম এইচটিটিপি কুকি (HTTP cookie)। এছাড়া ওয়েব কুকি, ইন্টারনেট কুকি ইত্যাদি নামেও পরিচিত।
কুকি কোনো ওয়েবসাইটে আপনার অ্যাক্টিভিটি, বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য (যেমন:- নাম, ঠিকানা, ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ডের নম্বর) ইত্যাদি সংরক্ষণ করে রাখে এবং এর সাহায্যে আপনাকে বিভিন্ন সেবা দিতে পারে। একটা কুকির সাইজ ৪০৯৬ বাইট পর্যন্ত হতে পারে।
কুকি আপনার কী কাজে লাগে দেখা যাক। ধরি, আপনি ব্রাউজারের মাধ্যমে ফেসবুকে লগ ইন করলেন। এরপর লগ আউট না করেই বেরিয়ে গেলেন। পরবর্তীতে আপনি একই ব্রাউজার দিয়ে ঢুকলে আপনাকে আর নতুন করে লগ ইন করতে হবে না, লগ ইন ছাড়াই ঢুকতে পারবেন। এই কাজটা কুকির মাধ্যমেই সম্ভব হয়, যাকে বলে অথেন্টিকেশন কুকি (authentication cookie)। আবার ধরি, আপনি ফেসবুক থেকে লগ আউট করে চলে গেলেন। পরবর্তীতে ফেসবুকে ঢুকতে গেলে আপনাকে আবার পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করতে হবে, না হলে ঢুকতে পারবেন না। সুতরাং কুকি যদি না থাকত, তাহলে যে কেউ আপনার অ্যাকাউন্টে অ্যাকসেস পেয়ে যেত।
আবার কিছু ওয়েবসাইটে দেখা যায়, আপনি কোনো লিংকে ঢুকলে পরবর্তীতে ঐ লিংকের রং নীল থেকে বেগুনি হয়ে যায়। এক্ষেত্রে কুকির মাধ্যমে সাইটটি জানতে পারে যে আপনি কোন কোন লিংকে প্রবেশ করেছেন আর কোন কোন লিংকে করেননি। এছাড়া অনেক সাইটে দেখা যায়, একবার কোনো ফরম পূরণ করলে পরেরবার ঐ ফরম আপনা-আপনিই পূরণ হয়ে যায়। একে অটো-ফিল (auto-fill) বলে। এই অটো-ফিলের জন্য কুকির প্রয়োজন হয়। কুকির মাধ্যমে পূর্ববতী ফরমের তথ্যগুলো সংরক্ষিত থাকে এবং পরের বার ঐ তথ্য দিয়ে অটোমেটিক ফরম পূরণ করে ফেলে।
তবে কুকির মাধ্যমে যেমন আপনি সুবিধা পাচ্ছেন, তেমনি এই কুকি আপনার জন্য বিপজ্জনকও হতে পারে। এর জন্য দায়ী হল থার্ড-পার্টি কুকি (third-party cookie)।
সাধারণত কোনো ওয়েবসাইটের কুকির তথ্য ব্যবহারের অধিকার থাকে শুধুমাত্র ঐ সাইটেরই। একে বলে ফার্স্ট-পার্টি কুকি (first-party cookie)। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে কুকি ব্যবহারের অধিকার ঐ সাইট ছাড়াও অন্য কোনো তৃতীয় পক্ষের হাতে থাকে। একেই বলে থার্ড-পার্টি কুকি। এধরনের কুকি সাধারণত বিজ্ঞাপন দেখাতে ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য তৃতীয় পক্ষের হাতে চলে যায় এবং এর ভিত্তিতে তারা আপনাকে আপনার পছন্দসই পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখায়। এতে করে আপনার প্রাইভেসি নষ্ট হতে পারে। এছাড়াও থার্ড-পার্টি কুকির মাধ্যমে হ্যাকাররা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য পেয়ে যেতে পারে এবং আপনার ক্ষতি করতে পারে।
থার্ড-পার্টি কুকি থেকে প্রাইভেসি নষ্ট হওয়া বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ অনেক দেশ আইন প্রণয়ন করেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আইন অনুযায়ী, কোনো ওয়েবসাইট কুকি ব্যবহার করতে চাইলে আগে ব্যবহারকারীর অনুমতি নিতে হবে।
অ্যাপলের সাফারি ব্রাউজারে ডিফল্টভাবেই থার্ড-পার্টি কুকি ব্লক করা থাকে। এ ছাড়া অন্য ব্রাউজারে সেগুলো ব্লকড থাকে না। তবে গুগল ক্রোমে আপনি ইচ্ছে করলে ব্রাউজার সেটিংসে গিয়ে থার্ড-পার্টি কুকি ব্লক করতে পারবেন। তাছাড়া কোনো ওয়েবসাইটকে কুকি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার আগে সাইটটির গুণাগুণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেবেন।
সবশেষে বলা যায়, ব্রাউজার কুকির অনেক অসুবিধা থাকতে পারে। কিন্তু আধুনিক ওয়েব-জগৎকে কুকি ছাড়া কল্পনা করা যায় না।
তথ্যসূত্র:-
১. https://tools.ietf.org/html/rfc6265
২. https://webcookies.org/faq/#Directive
৩. https://www.theverge.com/2020/3/24/21192830/apple-safari-intelligent-tracking-privacy-full-third-party-cookie-blocking
৪. https://venturebeat.com/2020/05/19/google-chrome-83/
অনিন্দিতা ঘোস
ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান