লেখকঃ মার্জিয়া মেহজাবিন তন্বি
© ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান |
মরিচের ঝালের জন্য ক্যাপসাইকিনয়েডস (capsaicinoids) নামে এক শ্রেণীর যৌগ দায়ী। এই শ্রেণীর বিভিন্ন যৌগ বিভিন্ন ধরনের মরিচের ঝালের জন্য দায়ী। এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী যৌগটি হলো ক্যাপসাইকিন (dominant), যেটা আসলে এক ধরনের vanilloid ও। এটা সাধারণত প্রায় সব মরিচেই পাওয়া যায়।
খাওয়ার সময় মরিচে থাকা ক্যাপসাইকিনোয়েডস মুখের শ্লেষ্মা ঝিল্লিতে (mucous membrane) থাকা একটি রিসেপ্টারের সাথে আবদ্ধ হয়। এতে ঐ ঝিল্লি একটা জ্বলন্ত সংবেদন সৃষ্টি করে ব্রেনে পাঠায় আর তাতেই মনে হয় ঝাল লেগেছে। তবে, যৌগটি কোনো টিস্যুর ক্ষতি করে না। যদি যৌগটি বারবার খাওয়া হয়, তাহলে সেই রিসেপ্টরের সংবেদী ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে যেটা কার্যকরভাবে আপনার ঝালের প্রতি সহনশীলতা তৈরি করবে ফলে ঝাল কম লাগবে। এর কারণ হলো দেহে ব্যথার অনুভুতি হলে আমাদের দেহ এন্ডোরফিন (endorphin) নিঃসরণ করে যা শরীরে প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসাবে কাজ করে। আর এর কারণেই পরবর্তী সময়ে ঝাল কম লাগে। এটি সম্ভবত মরিচ খাওয়ার প্রতিযোগিতা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়, যদিও তাদের দেখে মরিচ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই😜।
IUPAC: 8-methyl-N-vanillyl-6-nonenamide |
যদিও কোনো মরিচেই এত বেশি ক্যাপসাইকিন থাকে না যেটা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক (এমনকি নাগা বা ভুত মরিচও না)। যদিও ক্যাপসাইকিন একটি বিষাক্ত যৌগ। পরীক্ষা করে দেখা গেছে আনুমানিক একটা ইঁদুরেকে মারার জন্য মিডিয়ান লিথাল ডোজে (পরীক্ষার অর্ধেকগুলোকে মারার জন্য প্রয়োজনীয় ডোজ) প্রায় ৪৭.২ মি.গ্রা/কেজি থাকতে হয়।
পেপার বা গোলমরিচ স্প্রেতে ক্যাপাসেইসিনের ঘনত্ব কম থাকে তবুও এটা চোখে স্পে করলে মারাক্তক প্রদাহজনক প্রভাব সৃষ্টি করে আর চোখ বন্ধ করে। এটা মেয়েরা তাদের আত্নরক্ষার জন্য বেশ কার্যকরিভাবে ব্যবহার করে থাকে। যেসব কম্পানি এইসকল স্প্রে ব্যবহার করে তাদেরকে ক্যাপসাইকিন-এর পরিমান ন্যূনতম ১% শতাংশ ব্যবহার করতে বলা হয়। যদিও এটা চোখের তেমন ক্ষতি করে না।
মরিচের ঝাল মাপা
মরিচের ঝাল কয়েক উপায়ে মাপা যায়। প্রথম পদ্ধতি হলো স্কোভিল স্কেল (Scoville scale) । এ পদ্ধতিতে শুকনো মরিচকে একটি পরিমানে নিয়ে সেটাতে ক্রমাগত চিনি ও পানি দ্রবণ দিয়ে মিশ্রিত করা হয় যতক্ষণ না পাঁচ জন পরীক্ষকের প্যানেল দ্বারা তার ঝাল সনাক্তকরণযোগ্য। স্পষ্টতই, এটা নির্ভূল পদ্ধতির ধারের কাছেও না, তবে এ থেকে মোটামুটি অনুমান করা যায় যে একটি ইউনিটের সাথে মিশ্রিত ক্যাপাসাইসিনের ঘনত্ব প্রায় ১৮µmol/dm³এর সমান।
মরিচের ঝাল পরিমাপ করা জন্য আরেকটি পদ্ধতি হলো High Performance Liquid Chromatography (HPLC) যেটা আরও সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি। এ ধরনের ক্রোমাটোগ্রাফিতে, দ্রাবক নমুনা উচ্চ চাপের অধীনে একটি কলামের মাধ্যমে মিশ্রণের থেকে অলাদা করতে বাধ্য হয়। তারপর সেটার পরিমান বিচার করে ঝালের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।
HPLC-র সাথে আরো একটা পদ্ধতি আছে যেটাকে বলে Gas Chromatography বা Mass Spectrometry (MS)। এটা এমন একটা পদ্ধতি যেটা দিয়ে বিভিন্ন মরিচের ক্যাপসাইকিনয়েডের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। এই কাজ করার জন্য, একটি ক্যাপসাইকিন যৌগটি অবশ্যই ‘Internal Standard’ হিসাবে ব্যবহার করতে হবে যেটা পরিমিত পরিমাণ, বিশ্লেষণ করে আলাদা করা এমন প্রমাণ ক্যাপসাইকিন যৌগটি অজানা দ্রবণে যুক্ত করতে হবে। এর মাধমে আজানা যৌগটির পরিমাণ জানা যাবে। যার মাধ্যমে কতটুকু ঝাল সেটা জানা সম্ভব। তবে এখানে ‘Internal Standard’ ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই স্ট্যান্ডার্ডটি ব্যবহার করার ফলে গ্যাসের ক্রোমাটোগ্রাফি প্রক্রিয়াতে (HPLC) ত্রুটিগুলি এখানে হ্রাস করে।
মরিচের ঝাল নিবারণ
অবশেষে, মরিচের ঝালকে কীভাবে প্রশান্ত করা যায় তার উত্তরে আসি। ক্যাপসাইকিন অণুর দীর্ঘ হাইড্রোকার্বন শীকল এটিকে পানিতে অদ্রবণীয় করে তোলে। তবে অ্যালকোহল এবং তেলে সহজেই দ্রবণীয়। তবে বলা হয় যে বিয়ারের মধ্যে থাকে অল্প পরিমাণে অ্যালকোহল যা ঝাল দূর করাতে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারে না। খুব বেশি মরিচের ঝাল দূর করার জন্য সেরা উপায় হলো দুধ পান করা। এতে কেসিন (casein) নামক এক ধরণের প্রোটিন রয়েছে যা লিপোফিলিক এবং চর্বিযুক্ত ক্যাপসাইকিন অণুগুলিকে আটকে ফেলে যেটা খুব সহজেই সাথে তাদের ধুয়ে নিয়ে যায় এবং শ্লেষ্মা ঝিল্লিতে থাকা রিসেপ্টরকে উদ্দীপিত হওয়া থেকে বিরত রাখে।
তথ্যসূত্র এবং আরও পড়া:
প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান গ্রুপে।
উত্তরমুছুন