Ads Area

advertise

হার্ড ড্রাইভের ইতিবৃত্ত

0



একটি হার্ডড্রাইভ হলো এক সেট ডিক্সের সমাহার যা দেখতে ফোনোগ্রাফ রেকর্ডের মতো। ঘূর্ণন অবস্থায় প্রতিটা ডিক্সে তড়িৎ চৌম্বকীয়ভাবে ডেটা স্টোর হয় ট্র্যাক ও সার্কেল অংশে। ফোনোগ্রাফের হাতের মতো একটি হেড আছে, যা তুলনামূলকভাবে স্থির এবং তথ্য রিড বা রাইট করে থাকে ট্র্যাক থেকে। ডিক্স ঘোরার সময় দুই দিকে থাকা দুটো হেড একই সাথে ডেটা রিড ও রাইট করতে পারে। প্রতিটা রিড বা রাইট করার ডেটা লোকেটের দরকার হয় যাকে 'সিক' বলা হয়। তবে ডিক্সের ডেটা আগে থেকেই ক্যাশ করা থাকে, যা ডেটা লোকেট আরও দ্রুত করে।



ইতিহাসঃ

১৯৫৭ সালে প্রথম আইবিএম কম্পিউটারে 3.75 MB এর প্রায় ২০ ইঞ্চির এক বিশাল আকৃতির হার্ড ড্রাইভের ব্যবহারের মাধ্যমে এক যাত্রা শুরু হয়। তবে প্রথম পার্সোনাল হার্ড ড্রাইভ ১৯৭৯ সালে বাজারে আসে, যার আকৃতি ছিল ৫ MB।

তবে ৩.৫ ইঞ্চি ড্রাইভ Rodime সর্বপ্রথম তৈরী করে ১৯৮৩ সালে। এবং ল্যাপটপের জন্য ২.৫ ইঞ্চি হার্ড ড্রাইভ ১৯৮৮ সালে তৈরী হয়, যার সাইজ ছিল ২০ এমবি।

তবে সেটাগেট ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো ডিক্সে প্রতি ইঞ্চিতে ১০০ জিবি ডেটা স্থানান্তর সম্ভব হয়। এবং হিটাচি এর চার বছর পর ৫০০ জিবির হার্ড ড্রাইভ বের করতে সমর্থ হয়।

২০১৩ সালে সেটাগেট ৫ টেরাবাইট এর হার্ড ড্রাইভ বাজারজাত করে। এবং কয়েক বছরের মধ্যে তারা ১০,  ১২ এমনকি ১৬ টেরাবাইট ধারণক্ষমতা সম্পন্ন হার্ড ড্রাইভ আনে।


হার্ড ড্রাইভ কীভাবে জানতে হলে শুরুতে এসডি কার্ড কীভাবে কাজ করে এর সম্পর্কে কিছুটা জানার দরকার। আর্টিকেলটি পড়লে এই লিখাটা বুঝতে কিছুটা সুবিধা হবে- 

https://m.facebook.com/groups/bcb.science/permalink/3450037035079941/


তবে স্টোরেজের ক্ষেত্রে মেমরি এবং হার্ড ড্রাইভের অনেক বড়ো পার্থক্য আছে। আর এই পার্থক্য মূলত আকার, বিশাল স্টোরেজ, ডেটা ট্রান্সফার গতি, সুলভ মূল্যসহ বিষয়গুলো জড়িত।


হার্ড ড্রাইভের মূল অংশগুলো সব কেসিং এর মধ্যে থাকে। এই কেসিং শক্ত ও মজবুত হওয়াই ভিতরের অংশকে বাহিরের আঘাত থেকে রক্ষা করে। হার্ড ড্রাইভের মূল অংশগুলো হলো-

 

Platters:

হার্ড ড্রাইভে অনবরত ঘুর্ণায়মান একটি ডিস্ক থাকে যেটা প্লেটারস নামে পরিচিত। এটা মূলত অ্যালুমিনিয়ামের তৈরী। এর উপর নিকেল, কোবাল্ট ও প্লাটিনামের কোটিং করে দেওয়া থাকে, যেন চৌম্বকীয় ধর্ম প্রকাশ পায়। এবং তার ওপর কার্বন এর কোটিং থাকে যা দ্রুত ঘুরতে সাহায্য করে। একটি হার্ড ড্রাইভে

মোট ছয়টি ডিস্ক থাকতে পারে। এটা মিনিটে ৪৮০০/৫৪০০/৭২০০/১৫০০০ বার ঘুরে রিড ও রাইট করতে পারে। 


Read-write head:

এটি একটি ইলেকট্রোম্যাগনেট এবং রিট-রাইট আর্মের সাথে সংযুক্ত ও প্লেটারসের ওপর-নিচে থাকে। প্লেটার থেকে দূরত্ব 5nm এর মতো হয়, ডিক্সের সাথে একেবারে লাগানো থাকে না। লাগানো থাকলে প্লেটারসের ক্ষতি সাধন করবে। এই হেডের দুটো অংশ থাকে, যার একটি ম্যাগনেটাইজ করে রাইট করে, আরেকটা ডেটা রিড করে। আর এই দুই অংশ একটি প্লেটারসের ওপরে, অন্যটি নিচে থাকে।



Read-write arm:

এটি বাহুর মতো যার শেষ প্রান্তে রিড-রাইট হেড থাকে। এটি অত্যন্ত দ্রুত মুভ করতে পারে যার ফলে প্লেটারসে রিড-রাইট করতে সুবিধা হয়।




Central spindle

এটি প্লেটারসকে নির্দিষ্ট গতিতে ঘুরতে সাহায্য করে।


Actuator:

এটি রিড-রাইট আর্মকে ডিস্কের নির্দিষ্ট অংশে নিতে সহায়তা করে। বর্তমানের এটিতে ভয়েস কয়েল ব্যবহার করা হয়, যা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পদ্ধতিতে অত্যন্ত দ্রুত রিড ও রাইট হেডকে নাড়াচাড়া করতে সহায়তা করে।


Small spindle:

এটি রিড ও রাইট আর্মকে আটকে রাখে এবং প্লেটারের উপর সঠিক জায়গায় রাখতে সহায়তা করে।


Plag connector:

এটি হার্ড ডিস্কের বাহিরে থাকে যা পিসির সার্কিট বোর্ড এর সাথে সংযুক্ত করে।


Flexible connector:

এটি সার্কিট বোর্ড থেকে রিড-রাইট হেডে ডেটা ট্রান্সফারে সহায়তা করে।



হার্ড ডিস্ক কীভাবে কাজ করে?

প্লেটারসে মধ্যে থাকে প্রচুর ধাতব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ। এবং সেই ক্ষুদ্র অংশে ডেটা স্টোর হয় চৌম্বকীয় প্যাটার্নে। যার প্রতিটা অংশকে বিট বলা হয়। এই অংশগুলো ম্যাগনেটাইজ করা যায়, উত্তর বা দক্ষিণ দিকে। এই উত্তর-দক্ষিণ দিক মূলত ০/১ যা কম্পিউটার বুঝতে পারে।



প্লেটারসকে নির্দিষ্টভাবে ভাগ করা যায়, যা সেক্টর ও ট্রাকস নামে পরিচিত। ডেটা স্টোর হয় প্লেটারসের এই সেক্টর ও ট্রাকসে। ট্রাকস হলো একটি বৃত্তাকৃতির অংশ নিচের ছবির হলুদ অংশটির মতো। আর সেক্টর হলো ট্রাকের ছোটো একটি অংশ, ছবির নীল মার্ক করা অংশের মতো। আবার অনেকগুলো সেক্টর মিলে তৈরী হয় ক্লাস্টার। এতে সহজেই কোথায় ডেটা রিড করতে হবে বা কোথায় রাইট করতে হবে অথবা ডিলিট করতে হবে তা সহজে পিসি সহজে নির্ণয় করতে পারে।



এখন ডেটা রাইট হয় রিড-রাইট আর্মের ওপরে থাকা ছোট্ট তড়িৎচৌম্বক দিয়ে। এই চৌম্বক নির্গত ফিল্ড ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিটের চৌম্বকীয় দিক পরিবর্তন করতে সক্ষম। এভাবে দিক পরিবর্তন এর মাধ্যমে ডেটা স্টোর করা হয়। 


ডিস্কের বিপরীতে থাকা রিড হেডের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র প্লেটারসের ইমপাসল বুঝতে পারে এবং প্লেটারসের চৌম্বকীয় দিককে পাঠযোগ্য বা ০/১ এ কনভার্ট করে। আর প্লেটারসের নির্দিষ্ট সেক্টরে রাইট হওয়ায় কম্পিউটার বুঝতে পারে নির্দেশিত ফাইলটা কোথায় আছে এবং রিড করা দরকার।


তবে এখানে প্রশ্ন থাকতে পারে একটি A কে বাইনারী করলে দাঁড়ায় 01000001 বা ৮টা সংখ্যা।

এই হিসেবে ১ এমবির একটা ছবিতে প্রায় ৮০ লক্ষ সংখ্যার জন্য সম পরিমাণ বিট দরকার হয়।

তবে এত বিশাল পরিমাণ ডেটা কীভাবে স্টোর করা সম্ভব হয়?


আসলে আমরা যা রাইট করি প্লেটারসের মধ্যে করি। প্লেটারসকে বিশাল বড়ো বানানো সম্ভব হলেও, এতে বহু জটিলতা থাকে। সেজন্য প্লেটারসের এরিয়াকে বড়ো না করে একে আরও ঘন করা হচ্ছে বা প্রতি ইঞ্চিতে কতটা বেশি বিট ঢুকানো সম্ভব হবে তা নিয়ে গবেষণা চলছে।

বর্তমানের হার্ড ড্রাইভে প্রতি ইঞ্চিতে ৬০০ গিগাবিট পর্যন্ত ডেটা স্টোর করা সম্ভব। এটা প্রথম আইবিএম হার্ড ড্রাইভের চেয়ে প্রায় ৩০ কোটি গুণ বেশি।

বেশি ডেটা স্টোর এর আরও কিছু কারণ আছে যেমনঃ রিড-রাইট হেডে থাকা ম্যাগনেটটি প্লেটারসের যত কাছে থাকবে, ম্যাগনেটের আকার তত ছোটো হবে। আর এর আকার যত ছোটো হবে, তত বেশি বিট রিড-রাইট সম্ভব হবে। এতে স্টোরেজের পরিমাণও বড়ো করা সম্ভব।


আর হার্ড ড্রাইভের পারফরম্যান্স বোঝা যায় দুইভাবে-


ডেটা রেটঃ 

প্রতি সেকেন্ডে সার্কিট বোর্ডে কত বাইট ডেটা পাঠাতে সক্ষম তা বোঝায়। সাধারণ গতি সেকেন্ডে ৫-৩০ এমবি হওয়াটা কমন।


সিক টাইমঃ

সিক টাইম হলো সার্কিট বোর্ড এ কমান্ড দেওয়ার কত সময় পর হার্ড ডিস্ক ফাইলের প্রথম বিট পাঠাতে পারে সেটা। ১০-৩০ মিলিসেকেন্ড এখানে কমন একটা বিষয়।



হার্ড ড্রাইভের সমস্যাঃ


হার্ড ড্রাইভে অনেক কারণে সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যাগুলোকে ছয় শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন:


Electrical failure: 

এমনটা হয় যখন, অতিরিক্ত ভোক্টেজ হার্ড ডিক্সের সার্কিটকে ড্যামেজ করে। এবং রিড রাইট হেড বা সার্কিট বোর্ড ফেইল করে।

যদি হার্ড ডিক্সকে পুনরায় অন করা হয়, এটি ডেটা রিড রাইট বা বুট করতে পারে না।


Mechanical failure:

এমনটা হতে পারে হার্ড ডিক্সে জোরে আঘাত লাগলে, বা পড়ে গেলে এবং একে খোলা বা জোড়া দেওয়ার সময়। এমনটা হলে রিড রাইট হেড প্লেটারে আঘাত করে এবং প্লেটারে ড্যামেজ করে।


Logical failure:

এমনটা হয় যখন হার্ড ড্রাইভের সফটওয়্যার যখন ঠিকমতো রান করতে না পারে। ম্যালওয়ার বা ভাইরাস, অ্যাপ্লিকেশন ঠিক মতো বন্ধ না করলে বা ঠিক মতো পিসি বন্ধ না করলে, মানুষের ভুল বা ভুলে হার্ড ড্রাইভ ফাংশম করার ফাইল ডিলিট করলে এমন সমস্যা হতে পারে।


Bad sector failure:

যদি প্লেটারের কোনো সমস্যা হয় তবে সেই নির্দিষ্ট এরিয়ার ডেটা এক্সেস করা সম্ভব হয় না। এঔ সমস্যা খুব কমই হয়ে থাকে তবে সময় অতিবাহিত হতে হতে এমন ক্রুটি বেড়েই যায়। যার ফলে ক্রাস, ফাইল এক্সেস না থাকা, বা হ্যাং ও ল্যাগ করা যখম হার্ডডিক্সের কিছু করা হয়।


Firmware failure:

কোনো ড্রাইভে সফটওয়্যার মেইনটেইন্সের টাস্ক সম্পাদনা করছে এবং হার্ড ডিক্সকে সেই সময় অন্য কম্পিউটারে কানেক্ট করা হয় তবে সেটা করাপ্টেড বা ঠিক মতো কাজ করে না। এই রকমের সমস্যা বুটআপে প্রবলেম বা কম্পিউটার হার্ড ড্রাউভ আডেন্টিফাই করতে পারে না।


Multiple unknown failures: 

সময়ের সাথে এমন সমস্যা হতে পারে। যেমন, বিদ্যুৎ এ সমস্যা থাকলে ম্যাকানিক্যাল ফেইলিউর হতে পারে যা রিড রাইটে সমস্যা করে। আবার এর জন্য লজিক্যাল ফেইলিউরও হতে পারে যা প্লেটারে ব্যাড সেক্টেরের কারণ হয়।


সোর্সঃ

১.

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Hard_disk_drive

২ 

https://www.explainthatstuff.com/harddrive.html

৩ 

https://computer.howstuffworks.com/hard-disk.htm

৪ 

youtube.com 



https://searchstorage.techtarget.com/definition/hard-disk?amp=1


https://searchstorage.techtarget.com/definition/hard-disk?amp=1


রওনক শাহরিয়ার, 
ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Top Post Ad

Below Post Ad

advertise