লেখকঃ ধ্রুব নাথ
ভারতে ইদানীং “ব্ল্যাক ফাঙ্গাস” https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/health-fitness/health-news/coronavirus-after-rise-in-black-fungus-cases-white-fungus-cases-reported-in-india-heres-what-we-know-so-far/articleshow/82798610.cms
নামক একটি রোগের সংক্রমণ বেড়ে চলেছে।এমনকি কেন্দ্রীয় সরকার এই নতুন রোগকে মহামারি বলে চিহ্নিত করেছে।সর্বশেষ তথ্য অনুসারে ভারতে এই মুহূর্তে আট হাজারের বেশি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগে আক্রান্ত এবং কমপক্ষে ৯০ জন এই রোগে মারা গিয়েছে।কিন্তু এটি কি এমন রোগ যা মাত্র কদিনের মাঝে মানুষকে ভয় দেখাতে শুরু করেছে?http://www.bbc.com/news/world-asia-india-57217246
Centers for Disease Control and Prevention (CDC) এর তথ্যানুসারে Black fungus(ব্ল্যাক ফাঙ্গাস) যাকে Mucormycosis বলা হয় তা হচ্ছে এক ধরণের ছত্রাক জনিত সংক্রমণ যেটি Mucormycetes নামক ছত্রাকের কারণে হয়ে থাকে।এসব mucormycetes ছত্রাকসমূহ পরিবেশের সর্বাংশে , বিশেষ করে মাটিতে থাকে এবং বিভিন্ন জৈব উপাদান যেমন – পাতা, জৈব-সার, পঁচা কাঠ ইত্যাদিকে ক্ষয় করে।
সাধারণত পরিবেশে থাকা ছত্রাকের স্পোরের সংস্পর্শে এসে মানুষ mucormycosis এ আক্রান্ত হয়।উদাহরণস্বরূপ ফুসফুস কিংবা অস্থিকোটরে হওয়া mucormycosis ঘটে বায়ুতে থাকা স্পোরকে মানুষের গ্রহণ করার মাধ্যমে।এছাড়া বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের ভিতর ছত্রাক প্রবেশের মাধ্যমে। এটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিতে সক্ষম।
এই Mucormycosis বিভিন্ন ধরণের হতে পারে।
এর মধ্যে Rhinocerebral mucormycosis আছে অস্থিকোটরকে আক্রান্ত করে পরবর্তীতে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে। এই ধরণের mucormycosis সেসব মানুষের মধ্যে বেশি দেখা যায় যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আছে অথবা অতীতে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়েছে।
Pulmonary mucormycosis সাধারণত ফুসফুসকে আক্রান্ত করে।ক্যান্সার রয়েছে এমন কিংবা অঙ্গ বা স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়েছিল এমন ব্যক্তির মাঝে বেশি দেখা যায়।
যখন mucormycosis আমাদের দেহের ত্বকে দেখা যায় তাকে Cutaneous mucormycosis বলা হয়।বিভিন্নভাবে ত্বকের আঘাত যেমন- পোড়া বা কাঁটা অংশে ছত্রাক প্রবেশ করে।নিম্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়।
Disseminated mucormycosis ঘটে যখন সংক্রমণ রক্তের মাধ্যমে দেহের অন্যান্য অংশ যেমন হৃৎপিন্ড, প্লীহা, মস্তিষ্ক, ত্বক ইত্যাদিতে ছড়িয়ে পড়ে।
সর্বশেষ Gastrointestinal mucormycosis যেটি সাধারণ কমবয়সীদের মাঝে বিশেষ করে শিশুদের বেশি দেখা যায়।https://www.cdc.gov/fungal/diseases/mucormycosis/definition.html
রোগের উপসর্গ সমূহঃ
Rhinocerebral mucormycosis এ মুখের এক অংশে ফুলে যায়,মাথাব্যথা হয়,নাকে বা মুখের ভিতরে উপরের অংশে কালো ক্ষত হওয়া এবং সময়ের সাথে সাথে তা তীব্র হতে থাকে।
Pulmonary mucormycosis এ শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়,জ্বর হয়,কফ এবং বুকে ব্যথা শুরু হয়।
Cutaneous mucormycosis এ আক্রান্ত অংশ কালো হয়ে যায়, ব্যথা থাকে অতিরিক্ত লাল এবং ক্ষতের চারপাশে ফুলে যায়।
Gastrointestinal mucormycosis এর উপসর্গ হলো পেটে ব্যথা,বমি-বমি ভাব,পাকস্থলী এবং অন্ত্রে রক্তক্ষরণ হয়।
যেহেতু Disseminated mucormycosis তাদের ঘটে যারা ইতিপূর্বে অন্যান্য ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে অসুস্থ তাই mucormycosis সম্পর্কিত উপসর্গ জানা বেশ কঠিন।https://www.cdc.gov/fungal/diseases/mucormycosis/symptoms.html
Mucormycosis প্রতিরোধের উপায়ঃ
কথায় আছে “prevention is better than cure.”তাই এটিকে প্রতিরোধ করার পথই বেছে নেওয়া উচিত।Mucormycosis কোনো প্রকার ছোঁয়াচে রোগ নয় অর্থাৎ মানুষ কিংবা পশুপাখির মাধ্যমে ছড়ায় না,ছত্রাকের স্পোর দেহে প্রবেশের মাধ্যমে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। এছাড়া এসব স্পোর শরীরে প্রবেশ বন্ধ করা কষ্টকর কারণ mucormycetes ছত্রাকগুলো পরিবেশে প্রায় সর্বাংশে থাকে।তবে কিছু পদ্ধতি আছে যেমন- পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের সাথে সংস্পর্শে না আসা।নির্মাণকাজ বা খননকাজ পরিচালিত হচ্ছে এমন জায়গা, মাটি অথবা ধূলাবালির সংস্পর্শ যেমন – মাঠে কাজ,বাগান করা ইত্যাদি এড়িয়ে চলা।দেহের প্রতিটি অংশ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা,মাটি সংলগ্ন জিনিসপত্রের হাত দিয়ে ছোঁয়ার আগে গ্লাভস ব্যবহার করা ত্বকের সংক্রমণ এড়িয়ে চলার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ইত্যাদি।এছাড়া যারা অতিরিক্ত ঝুঁকিতে থাকে তারা চিকিৎসক কতৃক এন্টি-ফাঙ্গাল মেডিকেশন নিতে পারে।https://www.cdc.gov/fungal/diseases/mucormycosis/risk-prevention.html
Mucormycosis এর সাধারণ চিকিৎসা নিয়ে জানতে একটু ঢুঁ মেরে আসতে পারেন এখানেhttps://www.cdc.gov/fungal/diseases/mucormycosis/treatment.html
তবে কোভিড-১৯ এর সাথে এর কি সম্পর্ক?
ভারতে এখন পর্যন্ত যারা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে দেখা গেছে অধিকাংশই হয় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বা কিছুদিন আগেই হয়তো করোনা থেকে সুস্থ হয়েছে। বিষয়টা ঠিক এমন সুস্থ হয়ে ওঠার পরও অনেকের ইমিউন সিস্টেম অনেকটা দুর্বল থাকে আর এমন মানুষরাই Mucormycosis এ আক্রান্ত হয়েছেন।আর শুধু কোভিভ আক্রান্তরা নয় ডায়াবেটিক রোগীরা ,যারা স্টেরয়েড গ্রহণ করে এবং ক্যান্সার কিংবা অঙ্গ ট্রান্সপ্লান্ট এর মতো জটিলতা আছে তারাও এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
তাছাড়া বর্তমানে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস এর পর নতুন ধরণের সাদা ছত্রাক কিংবা হোয়াট ফাঙ্গাস দেখা দিয়েছে।তবে এ সম্পর্কে এখনো পর্যাপ্ত তথ্য কিংবা গবেষণা নেই।
ধ্রুব নাথ
ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান।